Ajker Patrika

ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে গাংনীর ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুর হাট

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৫: ৩৩
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সবচেয়ে বড় ও ২০০ বছরের পুরোনো বামন্দী পশুর হাট থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সবচেয়ে বড় ও ২০০ বছরের পুরোনো বামন্দী পশুর হাট থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুর হাট। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই হাটটি শুধু জেলারই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণে মুখর। ক্রেতারা কোরবানির জন্য খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দমতো গরু, ছাগল ও ভেড়া।

জেলার চাহিদা পূরণ করে এখানকার পশু চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জেলাতেও। এখন খামারি ও বাড়িতে পশু পালনকারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রয় নিয়ে।

বাড়িতে দু-একটি করে গরু পালন করলেও খামারগুলোতে রয়েছে বড় আকারের পশুর মজুত। অনেকে শখের বশেই পালন করছেন মহিষ। গাংনীতে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ছাগল ও ভেড়ার খামার থাকলেও পারিবারিকভাবেও ছাগল পালন বেশি হচ্ছে। গরু বিক্রির অর্থে পরিবারের খরচ মিটিয়ে অনেকে আবার নতুন গরু কিনে থাকেন।

বানিয়াপুকুর গ্রামের খামারি শাজাহান আলী বলেন, ‘শিক্ষিত বেকার যুবকেরা চাইলে খামারে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। সন্তানের মতো করেই গরু লালন করি। কোনো কেমিক্যাল নয়, প্রাকৃতিক খাবারই দিই। খৈল নিজেরাই উৎপাদন করি এবং তার থেকে তেল সরবরাহ করি দেশের বিভিন্ন জেলায়।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে বেশ কিছু গরু বিক্রি হয়ে গেছে, বাকিগুলো নিয়েও আশাবাদী।

বালিয়াঘাট গ্রামের খামারি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি বিনা সুদে ঋণ দিত, তাহলে অনেক যুবক এ পেশায় আগ্রহী হতো।’ তাঁর খামারে পরিবার মিলেই সারা বছর গরু লালন করা হয়।

আবুল বাশার বলেন, ‘পারিবারিকভাবে গরু পালন করছি। এখন পশু বিক্রির ব্যস্ততা চলছে। নারী সদস্যরাও পশু পালনে সহযোগিতা করছে। তবে গরম ও গোখাদ্যের দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

পশু কিনতে আসা ক্রেতা আবু জাফর জানান, অনেক দিন পর দেশে ফিরেছেন। পরিবার নিয়ে ঈদ করবেন। হাটে এসে দেখেন দাম বেশি, তবে ভালো পশু পেলে কিনবে।

আরেক ক্রেতা বলেন, ‘দাম বেশি হলেও পছন্দ হয়েছে বলে গরু কিনেছি। অনেকে এখনো দেখাদেখি করছেন।’

ছাগল ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন বলেন, ‘বামন্দী বাজারে বড় ছাগলের চাহিদা বেশি। গ্রাম থেকে ছাগল কিনে আনছি। এখন ছাগলের দামও বেশি।’

গরু ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বামন্দীর মতো বড় হাট আর নেই। হাটে প্রচুর গরু উঠেছে, চাহিদাও বেশ ভালো।’

পশুর হাটটির ইজারাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই হাট মেহেরপুরের ঐতিহ্য বহন করে। সপ্তাহে দুই দিন—সোম ও শুক্রবার বসে হাট। আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি, প্রশাসনও খোঁজ রাখে।’

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৮টি। এর মধ্যে গরু ৪১ হাজার ৫৭৮টি, ছাগল ৯৬ হাজার ৮৪৫, মহিষ ৩৮৫ এবং ভেড়া ২ হাজার ৩০টি। কোরবানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পশুর।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় চাহিদার চেয়েও বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা জেলার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য এলাকার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

আরিফুল ইসলাম আরও জানান, বামন্দী হাটে কোনো পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বামন্দী হাটে রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ, জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

চিরকুটে শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসন নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত