Ajker Patrika

ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেন প্রকল্প

পাঁচ বছরে অগ্রগতি ৩.৫%

  • এ পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
  • জমি, স্থাপত্যেরও সঠিক মূল্য নির্ধারিত হয়নি: জমির মালিকদের দাবি
  • অধিগ্রহণ শেষ হলেই আমরা দ্রুত কাজ করতে পারব: সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। গতকাল ঝিনাইদহের বিষয়খালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। গতকাল ঝিনাইদহের বিষয়খালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় পাস হয় যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প। ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও মূল্য। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬২৬ কোটি ৭৩ লাখ। এরপরও কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া একখণ্ড জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে সর্বশেষ ৮ আগস্ট ভূমির দাম নির্ধারণ করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে জমির মালিকেরা বলছেন, জমির বাজারমূল্য বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ লাখ, সেখানে তাঁদের ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমিতে থাকা স্থাপত্যেরও সঠিক মূল্য নির্ধারিত হয়নি। সার্ভেয়ার রিয়াজুল ইসলাম যাঁদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের জমি ও ভবনের সঠিক শ্রেণিতে দাম নির্ধারিত হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে রিয়াজুল বলেন, ‘এ ধরনের কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বর্তমান সময়ে জমি অধিগ্রহণে শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সার্ভে করার সময় ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।’

খানাখন্দে ভরা সড়ক

এদিকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার এই সড়কের অবস্থা বেহাল। বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ পিচের ওপর দায়সারা ইটের ফ্ল্যাট সলিং দিয়ে দুই বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষুদ্র সংস্কারকাজ করেছে। কিন্তু তাতেও সড়ক চলাচলের উপযোগী করা যাচ্ছে না।

ফ্লাইওভারসহ আরও যা থাকছে এ সড়কে

জানা গেছে, এই প্রকল্পে মোট ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৩৭৩ দশমিক ১৩ একর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সওজ ও ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার)। তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে প্রকল্পের কাজ। ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দিন সরকারি ডিগ্রি কলেজ গেট পর্যন্ত লট-১ (১৫.৯ কিলোমিটার), কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দিন সরকারি কলেজ গেট থেকে যশোরের মান্দারতলা পর্যন্ত লট-২ (১৫.৮ কিলোমিটার) এবং মান্দারতলা থেকে চাঁচড়া পর্যন্ত লট-৩ (১৫.৮ কিলোমিটার)। নির্মিত এ সড়কে থাকবে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫ কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস।

এ ছাড়া প্রকল্প করিডরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তরের লক্ষ্যে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল ডিজাইন করা হবে। পৌর এলাকার মধ্যে ৪ লেন এবং পৌর এলাকার বাইরে ৬ লেনে উন্নীত করা হবে রাস্তাটি।

সূত্র জানায়, লট-১ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানা জমি রয়েছে ৯১.৮৬ একর, সরকারি সংস্থার ১.৫২ একর, লট-২ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানা জমি রয়েছে ১৩২.২২ একর এবং লট-৩ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানা জমি রয়েছে ৭১.৫৭ একর এবং সেনানিবাসের ৮.০৮ একর জমি রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে জেলা পরিষদের জমি রয়েছে ১৪৫.৪৬ একর। মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের জমির মধ্যে মিল এলাকায় ১.৬৬ শতক, সদর উপজেলার বিষয়খালী মৌজায় ১৩ শতক, কালীগঞ্জের বারোবাজারে ৪৩ শতক, সাতমাইলে ৬৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ৩.১৫ শতক জমির মোট ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণের জন্য শনিবার সুগার মিলে নোটিশ পাঠিয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা।

জমির মালিকদের যত অভিযোগ

কালীগঞ্জের আড়পাড়ার বাসিন্দা এবং শহরের ঝরনা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক আবু জাফর বলেন, আড়পাড়া মৌজার ১৮৫ নম্বর খতিয়ানের ১১.১৫ শতক জমির মধ্যে ৩.১৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এই পুরো জমিতে তাঁদের একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। নিচে প্রিন্টিং প্রেস, দোকান এবং ওপরে একটি ডিজিটাল ফটো ল্যাব রয়েছে। তাঁর দাবি, তাঁদের জমি ও ভবন কালীগঞ্জ শহরের টপ পজিশনে অবস্থিত। কিন্তু সার্ভেয়াররা জরাজীর্ণ ভবন এবং নিম্ন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের ঠকিয়েছে। আপত্তি দাখিল করতে গেলেও তাঁরা বিভিন্ন অজুহাতে নেননি। উপায় না পেয়ে চলতি বছরের ২৬ মে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। হাইকোর্ট ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে আপত্তি গ্রহণের নির্দেশ দিলেও তাঁরা গ্রহণ করেননি।

কালীগঞ্জের বাদেডিহি গ্রামের আব্দুল মালেক বিশ্বাসের ছেলে জিনাত বলেন, ‘আমার জমির রেট দিচ্ছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা শতক। এই জমি বর্তমানে ২০ লাখের ওপরে শতক বিক্রি হচ্ছে।

ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আহমেদ সাদাত বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

উইকেয়ার ফেজ-১ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার নিলন আলী বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে না পারায় আমরা কাজ করতে পারছি না। লট-১ অঞ্চলে ৭.২৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে অন্যান্য লটে ২ শতাংশের নিচে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ হয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশের মতো। এখনো বিদ্যুতের পোল সরানো হয়নি। তাই আমরা সড়ক বিভাগের জমিতেও কাজ করতে পারছি না। অধিগ্রহণ শেষ হলেই আমরা দ্রুত কাজ করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত