Ajker Patrika

পদ্মা নদীতে বাড়ছে পানি

পানিবন্দী ৯ ইউনিয়নের মানুষ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিপৎসীমার ০.৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
  • দুই উপজেলায় ডুবে গেছে ৫২২ হেক্টর জমির ফসল।
  • কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পানিবন্দী ৪০ হাজার মানুষ।
  • ১৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ।
তামিম আদনান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পানিতে সড়ক ডুবে ব্যাহত হচ্ছে চলাচল। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে সড়ক ডুবে ব্যাহত হচ্ছে চলাচল। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে পদ্মা নদীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল ডুবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের সাড়ে ৬ হাজার পরিবার। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন নদীসংলগ্ন চার ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জানা গেছে, চরাঞ্চল এলাকায় ফসলি জমি, ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া প্লাবিত এলাকার মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মায় বর্তমানে ২১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতলি ইউনিয়নের ১ হাজার ১০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ২ হাজার, উজিরপুর ইউনিয়নের ৪৫০ ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে জীবনযাপন করছে। কৃষি বিভাগ জানায়, পদ্মা নদীর পানি উপচে ফসলি জমি ডুবে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সদর উপজেলার ৯৫ হেক্টর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৪২৭ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত।

পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, এসব এলাকার বহু ঘরবাড়ি এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ধানসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বাসিন্দা মো. পলাশ বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে পানি। এক হাত পানি বাড়লে বাড়িতে ঢুকে যাবে। পানিবন্দী হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’ দূর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজম আলী বলেন, দোভাগী, ফিল্টের বাজার, নামোজগন্নাথপুর ও বাদশাপাড়ার নিম্নাঞ্চলের জমি ডুবে গেছে। প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, বন্যার পানিতে ধান, ভুট্টা, শাকসবজি, হলুদসহ ৪২৭ হেক্টর জমির ফসল ডুবে রয়েছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়লে এবং তারপর কমতে শুরু করলে কিছু ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে পানি বেশি দিন থাকলে ক্ষতি হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনাইন বিন জামান বলেন, পদ্মার বন্যায় আজ পর্যন্ত ৯৫ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নিমজ্জিত এবং ১৫০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত। এতে ৫১৩ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী বলেন, নিচু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আপাতত আশপাশের উঁচু জায়গায় পাঠদান চালানো হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহনাস হাবীব বলেন, গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত পদ্মায় শূন্য দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আরও তিন দিন পানি বাড়বে। বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। শিবগঞ্জ ইউএনও আজাহার আলী বলেন, এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সাড়ে ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী। আজ (সোমবার) ৫০০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নারায়ণপুর ও আলাতলি ইউনিয়নের ৫০০-৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে ক্ষতির মুখে আছে। আগামীকাল বুধবার সরেজমিনে নারায়ণপুরে ত্রাণ বিতরণ করব। আলাতলিতে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেব।’

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া): এদিকে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের মানুষ। ইতিমধ্যে পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। এতে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি এখনো প্লাবিত না হলেও বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন নদীসংলগ্ন উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এ ছাড়া ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার নিচে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিদিন নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে, চরের ধান, মরিচ ও পাট ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি প্লাবিত না হলেও সবাই পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, নদীর ওপারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, যার অধিকাংশই পানিবন্দী। ঘরবাড়িতে এখনো পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল ডুবে গেছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, ইতিমধ্যে চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢোকায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকিগুলো সরেজমিনে দেখে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও আব্দুল হাই সিদ্দিকী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত