Ajker Patrika

৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রিতে পুড়ছে যশোর, তাপপ্রবাহে নাকাল জনজীবন

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ০২
Thumbnail image

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে যশোর। আজ সোমবার জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গাতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

টানা তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছে যশোরবাসী। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকুল। সারা দিন রোদ আর প্রচণ্ড গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে জেলাতে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে তেমন লোডশেডিং না হলেও গ্রামে রাত-দিন মিলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে ধান মাড়াইয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাস থেকেই যশোরঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সেটির রেকর্ড ভেঙে আজ তাপমাত্রার পারদ দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যদিও এর আগে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড কর হয় ২০০৯ সালে এপ্রিল মাসে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত কয়েক দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে শহরে দিনের বেলা লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। তবে তিন চাকার চালকেরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মুজিব সড়ক, দড়াটানা মোড় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র তাপপ্রবাহে প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও কম। কিছু ইজিবাইক, রিকশা দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের।

শহরের বকুলতলায় বসেছিলেন রিকশাচালক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। এত গরমে মানুষ বের হবে কি করে? আমরা পেটের দায়ে বের হয়ে যাত্রী পাচ্ছি না। ভাড়ার রিকশা চালাই, মহাজনকে দেওয়ার মতো টাকাও এখনো হয়নি।’

এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে জেলাতে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর দুইটার মধ্যে চার বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রতিবার ২০-২৫ মিনিট করে মোট দেড় ঘণ্টা মতো লোডশেডিং ছিল। এ ছাড়া গতকাল রাত ১২টার দিকে একবার বিদ্যুৎ গিয়ে ২০ মিনিট বন্ধ ছিল। গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি আমাদের গ্রামে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল লতিফ বলেন, গরমে এখন পিক আওয়ারে ১২৫-১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে কখনো পুরোটা পাওয়া যাচ্ছে। আবার কখনো দুই এক মেগাওয়াটে সংকট থাকছে। যেমন আজ সকালে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। ২০ মিনিট করে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে।

যশোর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। শহরে দিন রাতে দুই একবার বিদ্যুৎ গিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার বলেন, যশোর শহরে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ৭৫ মেগাওয়াট। পুরোটাই এখন পাওয়া যাচ্ছে। কোনো লোডশেডিং নেই। মাঝেমধ্যে যতটুকু লোডশেডিং হচ্ছে সেটা মেনটেন্যান্স (মেরামতগত) ত্রুটির কারণে হতে পারে।

অপরদিকে গরমের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ২৫ রোগী। যার মধ্যে ১১ জনই শিশু। গতকাল মোট রোগী ছিল ১১। আজ নতুন করে (সকাল ১০টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছে ১৪ রোগী। এ তথ্য দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনে আরা বেগম।

লাগাতার তাপপ্রবাহের কারণে রোদের মধ্যে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক প্রভাষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এই গরমে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এ সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করে। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকেরা যেন বেলা ১১টার মধ্যে এবং বিকলে তাপমাত্রা কমলে কাজ করেন।

জেলায় লাগাতার তাপপ্রবাহের কারণে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে ভাবছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যশোরাঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে আমরা দ্রুত কিছু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কতা বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে যাচ্ছি। লোকজন যেন এই রোদে ঘর থেকে বের না হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত