Ajker Patrika

সাতক্ষীরার শুঁটকি যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৯: ৫৫
Thumbnail image

সাতক্ষীরায় মিঠাপানির মাছ থেকে উৎপাদিত শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে দিনে দিনে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা জায়গায় যাচ্ছে এই শুঁটকি। এতে একদিকে যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন মাছচাষিরা, অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদন করেও লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। 

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৬৩ হাজার জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, খাল ইত্যাদি) ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে মিঠাপানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন। 

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, কার্পজাতীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলায় বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়, যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব। তবে জেলায় কী পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয়, তথ্য সংরক্ষিত না থাকায় তা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আনুমানিক ১ হাজার টন শুঁটকি প্রতিবছর সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হয়। সাধারণত সিলভারকার্প, বাটা, তেলাপিয়া, পুঁটি ও মৃগেল মাছের শুঁটকি উৎপন্ন হয় জেলায়। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় জানান, গত চার-পাঁচ বছর ধরে শুঁটকি তৈরি করছেন। তিনি সাধারণত সিলভারকার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ কিনে এনে বেতনা নদীর ধারে তাঁর খামারে শুঁটকি উৎপাদন করেন। 

তিনি আরও জানান, প্রতি মাসে তিনি প্রায় ৮ হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। আর এসব শুঁটকি চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করেন। প্রতি মন শুঁটকির পাইকারি দর সাধারণত ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। 

তালা উপজেলার ত্রিশ মাইল এলাকায় শুঁটকির খামার বানিয়েছেন রমেশ খাঁ। তিনি জানান, তাঁর আড়তের বয়স দুই বছরের মতো হবে। তিনি প্রতি মাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকেন। 

বিনেরপোতার আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী নৃপেন দাস জানান, স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে তিনি শুঁটকি তৈরি করেন। পরে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। 

তিনি বলেন, মিঠাপানির মাছে শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরা একটি খুবই সম্ভাবনাময় জেলা। কারণ এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ উৎপাদিত হয়। 

দেশের উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরের বিখ্যাত শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি তিনি সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুঁটি শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে পুঁটি শুঁটকি রপ্তানি করেন বলে জানান। 

তিনি বলেন, ‘সিলভারকার্প মাছের শুঁটকি আমাদের এলাকার লোকেরা পছন্দ করেন। তাই উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি।’ 

সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় শুঁটকি তৈরির কাজে ব্যস্ত খামারিসাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, মিঠাপানির শুঁটকি উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। বছরে প্রায় ২ লাখ টন সাদা মাছ (মিঠাপানির মাছ) উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, যা স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। 
 
তিনি আরও বলেন, এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বছরে একটি সময় ঘেরে ধান চাষ করার জন্য খুবই কম মূল্যে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। এ সময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে জেলায় কী পরিমাণ শুঁটকি মাছ উৎপন্ন হয়, তার পরিসংখ্যান জেলা মৎস্য অফিসে নেই বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত