Ajker Patrika

গাজীপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ২ বন্ধুর 

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ২ বন্ধুর 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উল্টো পথে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার উপজেলার ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের তেলিরচালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন–কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকার শামিম কাজীর ছেলে মো. সিয়াম কাজী (১৮) ও তার বন্ধু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে রুবেল হোসেন (১৭)।

এর মধ্যে সিয়াম কাজী স্থানীয় হলি মডেল পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। আর রুবেল দুই বছর আগে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি শুরু করে।

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সন্ধ্যার দিকে সিয়াম কাজী তার বন্ধু রুবেলকে নিয়ে তেলিরচালা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের উল্টো পথে মোটরসাইকেলে করে মৌচাক যাচ্ছিল। পথে তেলিরচালা জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা সামনে পৌঁছালে বিপরীতগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে নিয়ে গেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

তেলিরচালা হলি মডেল পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘নিহত দুজনই তার স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে রুবেল লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করত। তারা দুজন বন্ধু। একসঙ্গে চলাফেরা করত।’

ওসি শাহাদাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উল্টো পথে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। তবে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই নিহতদের স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার পর ট্রাক নিয়ে চালক পালিয়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ

ট্রেন আসে, ট্রেন যায়, স্টেশন তাকিয়ে রয়

  • সাড়ে ৩৮ হাজার কোটির প্রকল্পে চলে ৬টি আন্তনগর ট্রেন।
  • ২০ স্টেশনের ৮টিতে এখনো কোনো ট্রেন থামছে না।
  • কার্যক্রম না থাকা স্টেশন ভবন থেকে চুরি হচ্ছে সরঞ্জাম।
  • দিনে ৪৮টি ট্রেন চলার সক্ষমতা থাকলেও বাড়ছে না ট্রেন।
  • ১,৫৭৪ জনকে নিয়োগের প্রস্তাব ফেরত গেছে পাঁচবার।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ৮টি স্টেশনে থামে না কোনো ট্রেন। ফলে এই রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে জনবলের অভাবে কিছু স্টেশন থেকে সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে। সম্প্রতি পদ্মবিলা জংশন এলাকায়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ৮টি স্টেশনে থামে না কোনো ট্রেন। ফলে এই রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে জনবলের অভাবে কিছু স্টেশন থেকে সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে। সম্প্রতি পদ্মবিলা জংশন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ২০টি স্টেশনের ৮টিতেই কোনো ট্রেন থামে না। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন চালুর ১০ মাস পরও ট্রেন থামার অপেক্ষায় এসব স্টেশন। ট্রেন না থামায় এই রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব এলাকার মানুষ। অন্যদিকে কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ থাকায় আধুনিক এসব স্টেশন ভবন নষ্ট হচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে কিছু স্টেশন থেকে সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে।

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৩৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে নিয়মিত ট্রেন চলে মাত্র ৬টি; অথচ সক্ষমতা রয়েছে ৪৮টি ট্রেন চলাচলের। ফলে এই রেলপথ বাণিজ্যিকভাবে এখনো লাভজনক হয়ে উঠতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৩টি পুরোনো স্টেশন সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কার করা তিন স্টেশনের মধ্যে রয়েছে কমলাপুর, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা। গেন্ডারিয়ায় আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ছোট স্টেশন ছিল। সেখানে আধুনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এই স্টেশনে এখনো শুধু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনই থামে। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলো থামে ১১টি স্টেশনে। এগুলো হলো ভাঙ্গা জংশন, কাশিয়ানী, লোহাগড়া, নড়াইল, সিঙ্গিয়া, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর, ভাঙ্গা স্টেশন ও কমলাপুর রেলস্টেশন। ট্রেন থামায় এসব স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে পারে। পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করা ট্রেন যে ৯টি স্টেশনে থামছে না, সেগুলো হলো গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, জামদিয়া, পদ্মবিলা, রূপদিয়া। এসব স্টেশনে বর্তমানে কয়েকজন ওয়েম্যান ও প্রহরী আছেন, কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্রেন না থামায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক স্টেশন ভবনগুলো ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে। ঢাকায় একটি সরকারি দপ্তরে কর্মরত মো. জুবায়ের হোসেনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কপথ এখন বেশ ভালো, তাই প্রতিদিন বাড়ি থেকে অফিসে যাতায়াত করেন। সিরাজদিখানের কাছে নিমতলা রেলস্টেশন নির্মিত হলেও কোনো ট্রেন থামে না। ফলে ট্রেনের সুবিধা তিনি পান না। সরকারি টাকায় স্টেশন তৈরি করে ব্যবহার না হওয়া অর্থের অপচয়।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, কার্যক্রম না থাকা কিছু স্টেশন থেকে এরই মধ্যে দামি ইলেকট্রিক ফিটিংস, বাথরুমের সরঞ্জাম ও ভায়াডাক্টের গ্রিটিং চুরি হয়েছে। ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই বলেই এসব স্টেশন চালু করা হয়নি। পূর্ণরূপে পরিচালনার আগে জনবল অনুমোদন এবং সময়সূচি চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।

২০২৩ সালে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের একাংশ চালু হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে সরাসরি যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে এই রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা, মধুমতি, জাহানাবাদ, বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ ছয়টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। নতুন রেললাইন চালু হলেও বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এই রুট দিয়ে দিনে ৪৮টি যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল, কোচ, লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) না থাকায় পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছানো যায়নি। প্রকল্পে প্রস্তাবিত ১ হাজার ৫৭৪ জন নতুন জনবল নিয়োগের অনুমোদন এখনো দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে পাঁচবার সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আন্তনগর ট্রেন সব স্টেশনে থামানো সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতেই ট্রেনের বিরতি দেওয়া হয়। তবে কিছু স্টেশন এখন বন্ধ আছে। ধীরে ধীরে লোকাল বা কমিউটার ট্রেন চালু হলে সব স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে। এ ছাড়া জনবলসংকটের কারণে এখনই সব স্টেশন চালু করা যায়নি। তিনি বলেন, সব স্টেশনে আন্তনগর ট্রেনের বিরতি দিলে সময়সূচি ব্যাহত হবে। কিছু স্টেশনের সরঞ্জাম চুরির ঘটনায় জিআরপি মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ডিপিপি অনুযায়ী এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬২৮ দশমিক ৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্মাণ চুক্তির আওতায় ছিল ২৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। অবশিষ্ট খরচ হয়েছে ভ্যাট ও ট্যাক্স ৮ হাজার কোটি, ভূমি অধিগ্রহণে ৪ হাজার কোটি, পুনর্বাসনে ২০০ কোটি, ইউটিলিটি পরিষেবা স্থানান্তরে ৩০০ কোটি, পরামর্শক ব্যয় ১ হাজার ৩৩৩ কোটি, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ ৫০ কোটি টাকা।

২০২৬ সালের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন অবকাঠামো তৈরি হয়, সেখানে ব্যবহারের আগেই স্টেশন বন্ধ থাকা পরিকল্পনার দুর্বলতা নির্দেশ করে। এ ছাড়া বড় বড় প্রকল্প নেওয়া থেকে মনোযোগ কমাতে হবে রেলওয়েকে। রেলসেবাকে টেকসই করতে হলে স্টেশনভিত্তিক ব্যবসা এবং কমিউটার সার্ভিস চালুর দিকে নজর দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কার্গো ভিলেজে আগুন

পণ্য পেরিয়ে দ্রুত পৌঁছাতে পারেনি বেবিচকের দল

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনে বহু ব্যবসায়ীর পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়েছে কয়েক শ কোটি টাকার মালপত্র। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনে বহু ব্যবসায়ীর পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়েছে কয়েক শ কোটি টাকার মালপত্র। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব একটি বিভাগ রয়েছে। তবে গত শনিবার কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পর বিভাগটি বিভিন্ন কারণে তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের সবকিছু পুড়ে যায়। বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেবিচক বলেছে, ভবনটির যেখানে আগুন লাগে, তার সামনে একটি টিনের শেড এবং নিচে আমদানি করা টন টন পণ্যের স্তূপ থাকায় বেবিচকের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ গাড়ি নিয়ে দ্রুত পানি দিতে পারেনি। এতে দেরি হয়। পরে তারা বাইরে ভবনের সামনের সড়ক দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যরা এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।

বেবিচক জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের উত্তর পাশে বেবিচক কর্তৃপক্ষের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের দপ্তর। এই বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন পরিচালক আবু সালেহ মো. খালেক। এই বিভাগের সদস্যরা দুই বছর পরপর শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে ডামি উড়োজাহাজ তৈরি করে আগুন নেভানোর মহড়া করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে মহড়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তাদের জনবল, যানবাহন, প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা রয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের আগুন নেভানোর চারটি যানবাহন রয়েছে, একটি প্রোটেক্টর গাড়ি, একটি রোজেনবাওয়ার ও দুটি মরিতা। তবে একটি মরিতা গাড়ি নষ্ট। প্রোটেক্টর গাড়িতে একবারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার লিটার পানি ও ১ হাজার ৫০০ লিটার ফোম বহন করা যায়। অপর গাড়িগুলোতে ১০ হাজার লিটার পানি ও ১ হাজার ২০০ লিটার ফোম বহন করা যায়। গাড়ির পানি বা ফোম শেষ হলে আবার ভরতে হয়।

সূত্র জানায়, এসব গাড়ির নকশা আলাদা। এগুলো উড়োজাহাজের আগুন নেভানোর জন্য তৈরি। এসব গাড়ির সঙ্গে বড় পাইপের সংযোগ কম করা থাকে। অর্থাৎ ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ির চেয়ে এগুলো ভিন্ন। তাই বেবিচকের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের আগুনে পানি ছুড়ে তেমন সফল হয়নি।

দুটি সংস্থার প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ৯ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা শুরুর দিকে বেবিচকের অগ্নিনির্বাপণ দলকে সাহায্য করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলের ৩০০ মিটারের মধ্যেই বেবিচকের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ। কিন্তু তারা আগুনের কাছে এসে তাৎক্ষণিক পানি দিতে পারেনি। প্রথমে ধোঁয়া দেখে ভবনটির সামনের সড়কের আনসার সদস্যরা দ্রুত বিষয়টি জানান। এরপর বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ দলের একটি গাড়ি মাঠ দিয়ে আগুনের দিকে এগোনের চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের সূত্রপাতস্থলের সামনে একটি টিনের বড় শেড ও তার সামনে খোলা মাঠে কয়েক শ’ টন আমদানি করা ভারি মালামাল রাখা ছিল। এসব মালামাল সরিয়ে ওই গাড়ির পানি পৌঁছাতে পারেনি। এরপর বাইরে এসে পানি দেওয়ার চেষ্টা করার সময় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। নিরাপত্তাজনিত কারণে এলাকাটির প্রতিটি ফটকে ছিল কড়াকড়ি। কেউ প্রথমে ধারণা করেননি, আগুন এত তীব্র হবে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভাতে যোগ দেয়। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক কুরিয়ার এলাকার সামনের ফটক ভেঙে ফেলেন। কিন্তু আগুন এর মধ্যেই ছড়িয়ে যায়।

সূত্র জানায়, বেবিচকের অগ্নিনির্বাপক দলের প্রতিটি গাড়ির জন্য চালকসহ ছয়জন স্টাফ রয়েছেন। সেই হিসাবে চার গাড়ির জন্য ২৪ জন ফায়ার ফাইটার রয়েছেন। তারা শিফটে দায়িত্ব পালন করেন।

ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আগুন নেভার পর সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের জন্য যথেষ্ট প্রটেকশন ছিল না।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক আজ মঙ্গলবার সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

শনিবার বেলা সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো ভবনের আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের জায়গায় আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর অন্তত ৩৬ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন চিকিৎসাধীন এবং বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বিপুল নামে আনসারের এক সদস্য গাড়ি চাপায় বিমানবন্দরের সামনের সড়কে নিহত হন।

গতকাল দেখা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় বিকল্প ব্যবস্থা চালু হলেও আমদানি পণ্য ছাড় ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি। সচল করা যায়নি পুড়ে যাওয়া আমদানি কার্গো ভিলেজের নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। ফলে আমদানির মালামাল ছাড়ের আংশিক কার্যক্রম চলছে বিমানের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ দিয়ে। এতে কার্যক্রমে ধীরগতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আমদানিকারক ও এজেন্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে ইলিশ রক্ষা অভিযানে বারবার হামলা

  • ১৬ দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে অন্তত ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
  • বিভাগের ৬ জেলায় অভিযান চালানো হয়েছে ২ হাজার ৩৯৭টি।
  • ইলিশ নিধনকারীদের মধ্যেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
খান রফিক, বরিশাল 
কালাবদর নদীতে গত শনিবার অভিযানে জেলেদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কালাবদর নদীতে গত শনিবার অভিযানে জেলেদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলি করে অভিযানকারীদের ফিরে আসার মতো ঘটনাও ঘটছে। এদিকে হিজলা উপজেলায় জেলেদের হামলা প্রতিহতে নদীতে জলকামান ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথাও জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে অন্তত ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চলতি মাসের ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৯৭টি, মামলা করা হয়েছে ৮৭০টি, জেল হয়েছে ৫৮৯ জনের। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় অভিযানের সংখ্যা ৭৭৪টি, মামলা ৫০৬টি, জেল হয়েছে ৩৩৫ জনের।

শুধু অভিযানকারী দলের ওপরই হামলা নয়; ইলিশ নিধনকারী দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে এ কয়েকদিনে।

১৯ অক্টোবর হিজলার মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অভিযানকারী দলের ১৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ৮টি গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর আগে ১৮ অক্টোবর বরিশাল ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নসংলগ্ন কালাবদর নদীতেও জেলেদের হামলার শিকার হয় আভিযানিক দল। ওই দিনের বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন বলেন, ‘জান নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে এসেছি। হামলাকারীদের মোকাবিলা করতে আনসার সদস্যরা ২০টি ফাঁকা গুলি করেছেন। তা না হলে আমরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতাম না।’

এদিকে ১৩ অক্টোবর বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দুই গ্রুপ মৌসুমি জেলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়।

১১ অক্টোবর মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার একাংশের গভীর মেঘনায় ইলিশ নিধনকারী জেলেদের হামলায় ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিনসহ ১০ জন আহত হন। ১০ অক্টোবর হাজিরহাট এলাকার কালাবদর নদীর লাল বয়াসংলগ্ন এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শাকিল হাওলাদার (২৪) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।

মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘তাঁরা নদীতে নামবেন না। কিন্তু প্রায় এক মাস পেট চলবে কী করে? দেনা কীভাবে মেটাবেন? সব জেলে নদীতে নামে না। যারা এখন নামে তারা মৌসুমে এসেছে, এরপর আর তাদের দেখা যাবে না। কিন্তু মামলা আর জেলে পচে মরে সাধারণ জেলেরা।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, মা ইলিশ নিধন এবং অভিযানে হামলা করা দুঃখজনক ঘটনা। এভাবে মা ইলিশ ধ্বংস করলে জেলেরা একসময় বেকার হয়ে যাবে। মৌসুমি জেলেরা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে মৎস্য উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এক সভায় তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, নিরীহ জেলেদের জেল-জরিমানা না দিয়ে বিকল্প শাস্তি দিতে। জেল দিলে জেলেদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। উপদেষ্টাও এসব কথায় একমত পোষণ করেছেন।

জানতে চাইলে ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অধিকাংশ সাধারণ জেলে এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। কিছু আছে ডাকাতের মতো। অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এদের মদদ দিচ্ছে। বড় ট্রলারে সশস্ত্র হয়ে তারা হামলা করে আমার মাথাও ফাটিয়েছে। এজন্য সতর্ক হয়ে আমাদের এগোতে হয়।’ তিনি দাবি করেন, ‘অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছরের জেল দেওয়া দরকার। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার। হামলা এবং বেপরোয়াভাবে মাছ ধরলে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কিছু করার নেই। তবে জেলেদের মাছ ধরায় বিরত রাখতে পারাটাই আমাদের সর্বাগ্রে প্রয়োজন।’

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওমর সানি বলেন, এ বছর মেহেন্দীগঞ্জে হামলার ঘটনা কম, যত হামলা সব হিজলায় হয়েছে।

হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, জেলেদের ইটপাটকেল ও বাঁশের হামলা প্রতিহত করতে গতকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস নদীতে জলকামান ব্যবহার করছে।

অভিযানে জেলেদের হামলার প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ আজকের পত্রিকাকে জানান, উভয়পক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না সে বিষয় মাথায় রেখে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ: দুস্থদের কার্ড ধনীদের হাতে

  • ইউপি সদস্যের মেয়ে, ১৫ বিঘা জমি ও পাকা বাড়ির মালিকেরাও পেয়েছেন ভিজিডি কার্ড।
  • একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন ইউপি প্রশাসক ও সচিব।
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও আনিসুর রহমান ফনিক্সের পাকা ও আধাপাকা বাড়ি। তাদের পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন ভিজিডি কার্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও আনিসুর রহমান ফনিক্সের পাকা ও আধাপাকা বাড়ি। তাদের পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন ভিজিডি কার্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নে দুস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ ভিজিডি কার্ড (ভিডব্লিউবি) বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত দরিদ্ররা নয়, কার্ড পেয়েছেন ইউপি সদস্যের মেয়ে, প্রবাসীর স্ত্রী, চাকরিজীবীর পরিবার, এমনকি ১৫ বিঘা জমি ও পাকা বাড়ির মালিকেরাও। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, সচিব ও এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মিলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে এই তালিকা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, কার্ডের জন্য দিতে হয়েছে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ।

এ ঘটনায় মো. আবু হানিফ নামের এক ব্যক্তি ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নানা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানেও এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি প্রশাসক ও সচিব একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েছেন। এ ছাড়া তদন্ত চলাকালেই কার্ডধারীরা আগামী দুই মাসের চাল তুলে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। নির্বাচিত চেয়ারম্যান না থাকায় ইউপি সচিব মো. মহব্বত তালুকদার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি বিএনপি-সমর্থিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মো. সোলায়মান হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্প, জন্ম ও মৃত্যুসনদ এবং ট্রেড লাইসেন্সসহ সব কাজে অবৈধভাবে টাকা আদায় করে আসছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিজিডি কার্ডের জন্য ইউনিয়নে আবেদন পড়ে ৫৬০টি। গত ডিসেম্বর মাসে যাচাই-বাছাই শেষে ১৬০ জনকে মনোনীত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কার্ডধারীদের অন্তত ৫০ শতাংশই সচ্ছল পরিবার। প্রতিটি কার্ডের জন্য সাত থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। যাঁরা টাকা দিতে পারেননি, তাঁরা নীতিমালার আওতায় থাকলেও বাদ পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বৃ-পাচান গ্রামে ১১ জন নারী ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৯ জনেরই আধা পাকা বাড়ি ও তিন থেকে ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, এই ওয়ার্ডেই সর্বাধিক কার্ড বিতরণ হয়েছে। ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেম্বর মো. সোলায়মান হোসেনের মেয়ে রুপিয়া খাতুনের নামেও রয়েছে ভিজিডি কার্ড, অথচ তাঁর বিয়ে হয়েছে পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচলিয়া গ্রামে। একই ওয়ার্ডে বিশাল পাকা বাড়ির মালিক মো. আনিসুর রহমান ফনিক্সের মেয়েও কার্ড পেয়েছেন। এর কাছাকাছি জহুরুল ইসলামের পাকা বাড়ি, তাঁর স্ত্রী আকলিমা খাতুনের নামেও রয়েছে কার্ড।

বরাদ্দের ১৬০ কার্ডের মধ্যে শুধু বোয়ালিয়া গ্রামেই দেওয়া হয়েছে ৮৫টি। তার মধ্যে ৫০ জনই সচ্ছল। তাঁদের কারও আধা পাকা বাড়ি, কারও ১০-১৫ বিঘা জমি, কারও স্বামী প্রবাসী বা চাকরিজীবী। অথচ ওই গ্রামের শতাধিক অসচ্ছল নারী কার্ড বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মরিয়ম, আর্জিনা খাতুন ও রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা টাকা দিতে পারিনি বলে কার্ড পাইনি। অথচ ধনীরা টাকা দিয়ে ঠিকই কার্ড পেয়েছেন।’

জানতে চাইলে অভিযোগকারী মো. আবু হানিফ বলেন, ‘তদন্তে প্রতিকার না পেলে আমি আদালতে যাব।’ অভিযোগের বিষয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মো. সোলায়মান হোসেন ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কিছুটা তো ভুলত্রুটি হয়েই গেছে। লেখালেখি করলে ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইউপি সচিব মো. মহব্বত তালুকদার বলেন, ‘আমি তো হুকুমের মালিক নই, প্রশাসক যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেটাই বাস্তবায়ন করেছি।’ তবে তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে ইউপি প্রশাসক ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সব ভিজিডি কার্ড নির্ধারণ করেছেন ইউপি সচিব ও মেম্বর সোলায়মান। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি।’

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলার ইউএনও নুসরাত জাহান বলেন, ‘তাড়াশ সদর ইউনিয়নে কোনো লটারি হয়নি। সচিব ও মেম্বররা মিলে তালিকা করেছেন। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে দায় তাঁদের। এ-সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত