Ajker Patrika

আবাদি জমি-জলাশয় ভরাট করে আবাসন

  • আশপাশের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা
  • জমির শ্রেণি পরিবর্তন, হাউজিংয়ের জন্য নেওয়া হয়নি অনুমোদন
  • আবাসন প্রকল্পগুলো পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে, দাবি পরিবেশবাদীদের
  • অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইউএনও
গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৪৫
আবাদি জমি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প। সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আমতলা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবাদি জমি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প। সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আমতলা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প করছে একটি চক্র। এতে বিপাকে পড়েছেন পাশের জমির মালিকেরা। ইতিমধ্যে চক্রটি বেশ কিছু জমি ভরাটও করেছে। ঝুলিয়ে দিয়েছে প্লট আকারে জমি বিক্রির সাইনবোর্ডও। এ দৃশ্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আমতলা এলাকার। স্থানীয় কৃষেকেরা বলছেন, জলাশয় ও কৃষিজমি অল্প দামে কিনে মাটি ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এতে আশপাশের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ধান উৎপাদন করা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আমতলা কৌচাকুড়ি মৌজা এলাকায় কিছু অসাধু জমি ব্যবসায়ী নিচু জলাশয় এবং কয়েক ফসলি ও আবাদি জমি অল্প দামে কিনে মাটি ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প তৈরি করছে। উপজেলার ঢুবাইল এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ৪০০ শতাংশ জমি কিনে ভরাট করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা প্রায় ২০০ শতাংশ জমি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি শুরু করেছেন। লুসাইবা গ্রিন সিটি নামের ওই আবাসন প্রকল্পে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা করে একটি প্লট বিক্রি হচ্ছে। একই এলাকায় রূপালী সিটি-২ নামের পৃথক আবাসিক এলাকার সাইনবোর্ড দিয়ে ৮০ শতাংশ জমি ভরাট করে হাউজিং ব্যবসা শুরু করেছে। কিন্তু এসব কাজের জন্য জমির শ্রেণি পরিবর্তন, হাউজিং করার অন্যান্য সরকারি কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

এলাকাবাসী বলছেন, কৃষিজমিগুলোকে গিলে খাচ্ছে এই আবাসন প্রকল্প। গাজীপুরে ইটভাটা ও কলকারখানার পর নতুন করে ভয় ঢুকিয়েছে আবাসন। যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। এতে কমছে জমি ও ফসল উৎপাদন। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে কৃষকদের ওপর। তবে এসব ব্যবসায়ী এতটাই প্রভাবশালী যে তাঁদের থামানো বা প্রতিহত করা সাধারণ কৃষকদের পক্ষে অসম্ভব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমি বিক্রেতা বলেন, ‘এখানে ফ্যাক্টরি করার কথা বলে কামরুল ডাক্তার ও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে জমি কিনেছে। এখন কোনো ফ্যাক্টরি না করে প্লট করে বিক্রি করছে। তারা কৃষকদের এখনো জমির টাকা পরিশোধ করেনি।’

সাইনবোর্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে লুসাইবা গ্রিন সিটির দায়িত্বশীল সামছু বলেন, ‘আমরা এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানিয়ে সবকিছু করছি।’ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো অনুমোদন আছে কি না এবং কৃষি ও নিচু জমিতে আবাসন কীভাবে করছেন, জানতে চাইলে সামনাসামনি কথা বলতে হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানার জন্য রূপালী সিটি-২-এর সাইনবোর্ডে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা বলেন, ‘জমির মূল মালিক একটি নিচু জমি ভরাট করে আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। আমরা কয়েকজন মিলে নিজেরা বাড়ি করার জন্য ক্রয় করেছি। যেহেতু আমরা মাটি ভরাট করিনি, তাই আমাদের শ্রেণির পরিবর্তনসহ অন্যান্য অনুমতির প্রয়োজন নেই।’ যিনি মাটি ভরাট করেছেন, তিনি জানেন।

জেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় প্রতিবছর আবাদি জমি কমছে। এভাবে জমি কমলে হুমকিতে পড়বে ফসল উৎপাদন। আবাসন প্রকল্প থেকে কৃষিজমি রক্ষার ক্ষমতা কৃষি বিভাগের নেই। এটি বন্ধ করতে হলে আইন করে বন্ধ করতে হবে।

রতনপুর এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, এভাবে মাটি ভরাটের ফলে শুধু কৃষক আর কৃষিজমিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। এগুলোর ফলে এলাকায় দেশীয় মাছের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এলাকায় পানি আসত। এই প্রকল্পের ফলে রতনপুর, কব্জাচালা, ফুলচালা, আমতলার একাংশ এসব গ্রামে বর্ষা মৌসুমে ঠিকভাবে পানি চলাচল করতে পারবে না।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, নিচু জমি ও কৃষিজমিতে এভাবে আবাসন ব্যবসা শুরু হলে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ ছাড়া এসব প্রচলিত আইন অনুযায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। কৃষিজমিতে আবাসন করতে হলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হয়। আর শ্রেণি পরিবর্তনের সময় যৌক্তিকতা এবং পরিবেশের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি। আবাসন প্রকল্পগুলো পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। জমি ব্যবহারের আইন অনুযায়ী আবাসন স্থাপিত হবে। আইনের ফাঁক দিয়ে যাতে কৃষিজমিতে আবাসন না হয়, সে জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

কালিয়াকৈরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহম্মেদ বলেন, কালিয়াকৈরে নিচু জমি ও আবাদযোগ্য কৃষিজমিতে কোনো আবাসন গড়ে তোলার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জমির শ্রেণি পরিবর্তন বন্ধের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করে কেউ অবৈধভাবে জমির শ্রেণির পরিবর্তন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত