Ajker Patrika

ভূঞাপুরে ১০০ বিয়ের ৩৬টিই গড়াচ্ছে বিচ্ছেদে

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ৪৫
১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে প্রতীকী ছবি
১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় সাম্প্রতিক বিবাহবিচ্ছেদের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০০টি বিয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬টি বিচ্ছেদে গড়াচ্ছে, যা সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

উপজেলা ও পৌর কাজি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৮৩৭টি বিয়ে হয়েছিল, যেখানে ৩১৯টির বিচ্ছেদ হয়। এক বছর পর ২০২৪ সালে বিয়ে বেড়ে ৯২৯টিতে পৌঁছালেও বিচ্ছেদের সংখ্যাও বেড়েছে ৩৩৭টি। অর্থাৎ, ভূঞাপুরে মোট বিয়ের তুলনায় বিচ্ছেদের হার ৩৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বিশেষ করে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নে বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি, যেখানে গত বছর ১১৩টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। এ ছাড়া গোবিন্দাসী ইউনিয়নে ৩৯টি, গাবসারা ইউনিয়নে ৪৮টি, অর্জুনা ইউনিয়নে ৫৭টি, অলোয়া ইউনিয়নে ৩২টি, ফলদা ইউনিয়নে ৪২টি এবং পৌর এলাকায় (তিনটি কার্যালয়) ৪১টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিচ্ছেদের পেছনে বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।

এখানকার সমাজে বিয়েকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বন্ধন হিসেবে দেখা হয় এবং পারিবারিকভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেশির ভাগ গ্রামে কৃষক পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে হয়ে থাকে। যেখানে সামাজিক ঐতিহ্য ও পারিবারিক সম্মান বজায় রাখার গুরুত্ব বেশি থাকে।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, বিয়ের এই প্রবণতা নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামো এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল, যেখানে প্রথাগতভাবেই তরুণ-তরুণীদের বিয়ে দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী বর্তমানে স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, যদিও সামাজিক চাপের কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণী বলেন, ‘আমরা চাইছি শিক্ষার মাধ্যমে জীবনকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে। তবে পরিবারের আগ্রহ এবং সমাজের দিকে তাকিয়ে আমরা অনেক সময় নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নারী জানান, সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, কেবল তখনই বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হয়।

এক বিচ্ছেদকৃত নারী বলেন, পারিবারিক অশান্তি এবং আর্থিক সংকট আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন তৈরি করেছে। এখন আমি স্বাধীনভাবে জীবন শুরু করতে চাই।

অন্যদিকে মাটিকাটা গ্রামের মো. মনির নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে বিয়ে করি। ভালোই যাচ্ছিল আমরাদের সময়। একটা বাচ্চা আছে। কিন্তু আমার স্ত্রী পরকীয়া করত। সে আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। তারপর সে আমাকে তালাক দেয়।’

ভূঞাপুর উপজেলার কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বলেন, ‘বিচ্ছেদ বা পরিবার ভাঙার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে একটি নেতিবাচক মনোভাব থাকে। তবে পরিবারগুলোর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং একটি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগম বলেন, ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত

কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে

আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া যাচ্ছে ইউরোপে, কেনিয়ার বিমানবন্দরে জব্দ কয়েক লাখ

কফিশপে মারধরের শিকার সেই তরুণীর খোঁজ মিলেছে, থানায় জিজ্ঞাসাবাদ

বিএনপি ‘সন্তুষ্ট’ নয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত