Ajker Patrika

বাহারি স্টলে রকমারি বই

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
পছন্দের বইয়ের পাতা ওলটাচ্ছেন কয়েকজন। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পছন্দের বইয়ের পাতা ওলটাচ্ছেন কয়েকজন। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বইমেলার দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। ঝকঝকে নতুন স্টল আর প্যাভিলিয়নগুলো এরই মধ্যে দর্শক-ক্রেতার পদচারণে মুখর। নতুন বইয়ের খোঁজখবর নিচ্ছেন বইপ্রেমীরা। নতুন বই অবশ্য আসা শুরু হয়েছে মাত্র। প্রকাশকদের ভাষ্য, সব বই মেলায় আসতে প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে। বরাবরের মতো তারপরও আসবে আরও কিছু নতুন বই। পাঠকেরা অবশ্য ঘেঁটে দেখছেন ও কিনছেন নতুন-পুরোনো সবই।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করা প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা বিশাল। মেলায় অংশ নিয়েছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, যা গতবার ছিল ৬৪২। বিভিন্ন রকমের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এসব প্রকাশক।

বইমেলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে অনুপম প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন। সৃজনশীল বই বের করে প্রতিষ্ঠানটি। এবার তারা গুরুত্ব দিয়েছে রহস্য ও রোমাঞ্চ উপন্যাসে।

অনুপমের মিডিয়া ম্যানেজার শাহীন বলেন, তাঁরা সৌমেন সাহার ‘বিশ্বভরা রহস্য সিরিজ’ এবং ধ্রুব এষের তিনটি রোমাঞ্চ উপন্যাস একসঙ্গে এনেছেন ‘থ্রিলারস’ নামে। আহসান হাবিবের তিনটি রোমাঞ্চ গল্প নিয়ে ‘অপারেশন ফুল মুন’ও তাঁদের এবারের নতুন সংযোজন।

অনুপমের প্যাভিলিয়নের কাছেই পাওয়া গেল প্রকাশনীর কর্ণধার মিলনকান্তি নাথের দেখা। তিনি বললেন, শুরু হিসেবে আগত লোকজনের সংখ্যা বেশ ভালো। বইও কিনছে তারা।

সৃজনশীল নানা বই বের করে বেঙ্গল বুকস। বিক্রয়কর্মী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, তাঁদের কিছু নতুন বই এসেছে, আরও আসবে। তবে তাঁদের পুরোনো বইগুলোও নেড়েচেড়ে দেখছেন পাঠক। মো. আজিজুর রহমান লসকরের ‘আমেরিকার আদিবাসীদের লোককাহিনি’ এনেছে বেঙ্গল। শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের জীবনী তাঁদের অন্যতম আকর্ষণ। শিল্পী জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, রফিকুন নবী, স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে নিয়ে বই এনেছে বেঙ্গল।

ফিউচার উম্মাহ বিডি নামের একটি স্টলে বাবার সঙ্গে দেখা গেল দুই শিশুসন্তানকে। এক ছেলে বাবার কাছে পাজল (ধাঁধা) বই কিনতে চাইল। বইয়ের পাতায় পাতায় নানা পাজল। সেগুলো মিলিয়ে তৈরি হয় নানা কিছু।

শিশুদের বই নিয়ে বইয়ের ডালা সাজিয়েছে মহাকাল প্রকাশনীও। ছবি ও লেখা নিয়ে সাজানো বইগুলো। ‘সাত দৈত্যের দেশে’, ‘ডাইনোসর’, ‘নেকড়ে ও সাত ছাগলছানা’ বইগুলো নিয়ে এসেছে তারা।

ভৌতিক ও রোমাঞ্চকর বইয়ের পসরা দেখা গেল জাগৃতিতে। আফজাল হোসেনের ‘কারিন’, তুহিন রহমানের ‘বুড়োর কফিন’ পাঠক কিনছেন বলে জানালেন বিক্রয়কর্মী লাবণী।

ভাষাচিত্রের বিক্রয়কর্মী শাহ আলম জানিয়েছেন, এবার তাঁরা সিকুয়েলই (পরবর্তী পর্ব) বেশি বের করছেন। অতিপ্রাকৃত উপন্যাসে ক্রেতা-দর্শকের আগ্রহ বেশি দেখছেন। গতবার যেগুলো বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর নতুন পর্ব আনছেন তাঁরা। এগুলোর মধ্যে আছে হাসান তারেক চৌধুরীর ‘গড পার্টিকেল’। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বিখ্যাত গানগুলো সৃষ্টির নেপথ্যের গল্প নিয়ে বই ‘অল্প কথার গল্প গান’-এর পঞ্চম খণ্ড এসেছে।

বাংলা ধরিত্রীর প্রধান নির্বাহী দিলোয়ার হোসেন জানালেন, বামপন্থী রাজনৈতিক বইসহ সব ধরনের বই বের করেন তাঁরা। নজরুল ইসলামের ‘আগামী বাংলাদেশের দশ করণীয়’, জ্ঞান চক্রবর্তীর ‘ঢাকা জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অতীত যুগ’ এবং কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নির্বাচিত রাজনৈতিক কবিতা’ তাঁদের নতুন বই।

নটিলাস পাবলিকেশনস থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে হারুকি মুরাকামির ‘অদ্ভুত লাইব্রেরি’ এবং সঞ্জয় দের ভ্রমণকাহিনি। প্রকাশনীর মালিক আশিক সারোয়ার জানান, তাঁরা বিদেশি বই অনুবাদ করে পাঠকের কাছে নিয়ে আসছেন।

বেশ কিছু ইসলামি প্রকাশনীও চোখে পড়েছে মেলায়। মাকতাবাতুল ইসলাম তাদের মধ্যে একটি। ইসলামি ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাভিত্তিক সৃজনশীল গল্প, উপন্যাস এনেছে তারা। এ ছাড়া এনেছে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে প্রাণ দেওয়া মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে ‘জুলাই বিপ্লবে আলেম শহীদ যারা’ নামের বই। মাকতাবাতুল ইসলামের স্বত্বাধিকারী আহমাদ গালিব বলেন, ‘আগে আমাদের মতো প্রকাশনীগুলো সুযোগ পেত না। বাংলা একাডেমির সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও সুযোগ দেওয়া হতো না। এবার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সব শর্ত পূরণ করেছি। সব নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে।’ ইসলামি ঘরানার স্টলের মধ্যে আরও আছে মাম্মী প্রকাশনী, সোলেমানিয়া বুক হাউস, আলোকিত প্রকাশনী, হাদীছ ফাউন্ডেশন ইত্যাদি।

রাজনৈতিক বই নিয়ে স্টলও দেখা গেছে। বিএনপির নেতৃত্ব ও রাজনীতি বিশেষ করে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে বই সাজিয়েছে ইতি প্রকাশন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টল রয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ে এসেছে আইসিএস প্রকাশনী।

নানা বইয়ের ভিড়ে পাঠক কিনেছে তাদের পছন্দের বই। জানিয়েছে প্রিয় লেখকের কথা। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণের বই পড়তে ভালো লাগে তাঁর। তাঁদের লেখা কিছু বই কিনছেন।

দুই বান্ধবী খুব তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছিলেন মেলা থেকে। জানালেন হুমায়ূন আহমেদ পছন্দ তাঁদের। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা মিরাজুল ইসলাম কিনেছেন আহমদ ছফার ‘ওংকার’ ও ‘বাঙালি মুসলমানের মন’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’। জানালেন, বেড়াতে এসেছিলেন ঢাকায়, বাড়তি পাওনা হিসেবে মেলাও ঘুরলেন।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলায় রোববার নতুন বই এসেছে ১৩টি।

বিভিন্ন আয়োজন:

গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হেলাল হাফিজের রাজনৈতিক পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৃদুল মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন সুমন রহমান। প্রাবন্ধিক বলেন, উনসত্তরের গর্ভ থেকে যেসব কবির জন্ম হয়েছিল, কবি হেলাল হাফিজ তাঁদের অন্যতম। তাঁর কবিতার উচ্চারণ ছিল রাখঢাকহীন।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রাসেল রায়হান, কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন শফিক এবং শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন কবি হাসান হাফিজ এবং জাকির আবু জাফর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবণী এবং শিপন হোসেন মানব। সুমন মজুমদারের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঙ্গীতমঞ্জুরী শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, প্রিয়াংকা গোপ, ইসরাত জাহান, মিজান মাহমুদ রাজীব, মো. মাইদুল হক ও নাফিজা ইবনাত কবির।

আজ বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হায়দার আকবর খান রনো’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন ও জলি তালুকদার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত