Ajker Patrika

নামেই মাদানি অ্যাভিনিউ, চলাচলে নিত্য দুর্ভোগ

  • সড়কটির ভাটারা থানার সামনে থেকে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা।
  • ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, বৃষ্টির পানি জমে ঢাকা পড়ে গভীরতা, উল্টে যায় যানবাহন।
সেলিনা আক্তার, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০০: ০৮
ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার মাদানি সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার মাদানি সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর মাদানি অ্যাভিনিউ ঘিরে আছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জনবসতি। ১০০ ফুট প্রশস্ত ব্যস্ততম এই সড়ক নামেই অ্যাভিনিউ। কারণ, এর দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা, রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত; যা চলাচলকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে নিত্য দুর্ভোগের। প্রভাব পড়েছে এলাকার ব্যবসায়। ভাড়াটেরা ছাড়ছে এলাকা।

এলাকাবাসী জানান, ঢাকা ওয়াসার গন্ধবপুর পানির লাইন প্রকল্পের জন্য সড়ক কাটার পর থেকে দিন দিন হাল খারাপ হয়েছে। বৃষ্টিতে পানি জমে বড় বড় গর্ত ঢাকা পড়ায় চলাচল হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে মাঝে ভাঙা সড়কে নামমাত্র বালু ও সুরকি ফেলে দায় সারা হচ্ছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তা মেরামত বাবদ ক্ষতিপূরণের অর্থ রাজউককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ষাকালের পর কাজ শুরু হবে বলে রাজউক জানিয়েছে।

মাদানি অ্যাভিনিউর এই অবস্থার জন্য পরিকল্পনার অভাব ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন নগর-পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি বার্ষিক সমন্বয় সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে হয় না। এ কারণে রাস্তা একবার ঠিক করার পর আরেক সংস্থার উন্নয়নকাজের জন্য আবার কাটা হচ্ছে। প্রকল্প শুরু করার আগে যথাযথভাবে পরিকল্পনা করা হয় না। ফলে কোথায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে, তা নির্ধারিত থাকে না। এতেই তৈরি হয় জনদুর্ভোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদানি অ্যাভিনিউর ভাটারা থানার সামনে থেকে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের অংশ ভাঙা। সৌদি আরব দূতাবাসের সামনে থেকে সাঈদনগর পর্যন্ত কিছু ভালো, এরপর ভাঙা। সড়কে তৈরি হওয়া ছোট-বড় গর্তগুলো বৃষ্টি হলে পানিতে ভরে যায়। কোনো কোনো গর্তের গভীরতা এক ফুটের বেশি। এমন গর্তে চাকা পড়ে প্রায়ই আটকে যাচ্ছে যানবাহন। অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান উল্টে গিয়ে আহত হচ্ছে মানুষ। দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার দুই পাশের যানবাহন বাধ্য হয়ে এক পাশ দিয়ে চলছে। আবার ভাঙা সড়কের কারণে যানবাহন ধীরে চলায় তৈরি হচ্ছে যানজট। এই মাদানি অ্যাভিনিউতেই রয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

জানা যায়, ২০২২ সালে শুরু হওয়া ঢাকা ওয়াসার গন্ধবপুর পানির লাইন প্রকল্পের জন্য মাদানি অ্যাভিনিউর এক পাশে কাটা হয়। এরপর কাটা অংশের পাশে ভাঙতে থাকে সড়ক। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বালু ও সুরকি ফেলে সড়কের ভাঙা অংশ ভরাট করলেও তা টিকছে না।

মাদানি অ্যাভিনিউ দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. ইমাম শাফী বলেন, গ্রীষ্মকালে ভাঙা রাস্তায় ধুলাবালুর কারণে মাস্ক ছাড়া হাঁটা যায় না। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পানিতে ঢাকা পড়া গর্ত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাতুল আহসান বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণে ক্লাস বা পরীক্ষার সময়ে রিকশা পাওয়া যায় না। পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়।

ভাটারার স্থায়ী বাসিন্দা মো. ওয়াদুদ ইসলাম নিলয় বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে সড়কটি বেহাল। কত দিন এই অবস্থা থাকবে জানেন না।

বেহাল সড়কের কারণে এলাকার দোকানে বিক্রিতেও মন্দা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে সংসার চলে দোকানি মো. কবীরের। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে কাদার জন্য দোকান খুলতে পারেন না। আবার খুললেও ক্রেতা আসে না।

বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক দোকানি দোকান ছেড়েছেন। অনেক দোকান ফাঁকা, ‘ভাড়া হবে’ সাইনবোর্ড ঝুলছে। বাসার অবস্থাও একই। যাতায়াতে কষ্টের কারণে অনেক ভাড়াটে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বাড়িমালিকদের একজন হাসিনা বেগম বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া দিয়ে আমার সংসার চলে। রাস্তার অবস্থার কারণে কয়েকটা রুম ফাঁকা পড়ে আছে। ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটে পাচ্ছি না।’

মাদানি অ্যাভিনিউর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির লাইন নিতে রাস্তার এক পাশ কাটা হয়েছে। অপর পাশ চলাচল উপযোগী করে দেওয়া হয়। বৃষ্টির কারণে সেই অংশটুকু ভেঙে গেছে। ইতিমধ্যে ওয়াসার প্রকল্পের মাদানি অ্যাভিনিউর অংশের কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তা মেরামত বাবদ ক্ষতিপূরণ রাজউককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের পর তারা কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত