Ajker Patrika

ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তের দাবি পরিবারের

প্রতিনিধি
ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তের দাবি পরিবারের

আটপাড়া (নেত্রকোনা): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টির মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তদন্তের দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার। একই দাবি তুষ্টির সহপাঠী এবং এলাকাবাসীর।

আজ সোমবার দুপুরে তুষ্টির গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্য, সহপাঠী ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এ দাবি জানান।

এর আগে সকাল ৯টায় নীলকণ্ঠপুর তহসিলের মাঠে তুষ্টির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে এবং শেষবারের মতো তুষ্টিকে এক নজর দেখতে তহসিলের মাঠে মানুষের ঢল নামে। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়।

তুষ্টির বাবা আলতাফ উদ্দিন বলেন, ‘তুষ্টি ছিল আমার একমাত্র মেয়ে। খুব আদরের ছিল সে। তুষ্টি আমার গর্ব ছিল। এলাকাবাসীর গর্ব ছিল। হঠাৎ করে সে ঢাকার বাসায় বাথরুমে মারা গেল। কিন্তু তার মৃত্যুর আসল কারণ কি তা আমরা এখনো জানতে পারছি না। আমি চাই দ্রুত আমার মেয়ের মৃত্যুর মূল কারণ খুঁজে বের করা হোক।’

তার মা হেনা আক্তার বলেন, ‘সবাই সম্পদ গড়ে তোলে। কিন্তু আমরা তা না করে আমার মেয়েকে বই কিনে দিতাম। তুষ্টিকেই আমরা সম্পদ ভেবে পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা ফসল ফলাতে পারলেও ফসল ঘরে তোলা আর হল না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, আমার সোনার টুকরো মেয়েটা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে বলে আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। তার মৃত্যুর কারণটা জানা এখন আমাদের জন্য জরুরি।

তুষ্টির চাচা মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তুষ্টির কিছুটা শ্বাসকষ্ট ছিল। তা আমরা জানতাম। কিন্তু সেটা মরে যাওয়ার মতো না। সামান্য শ্বাসকষ্টের জন্য বাথরুমে গিয়ে তাঁর মরে যাওয়ার কথা না। এটা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।

তার আরেক চাচা প্রভাষক ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, তুষ্টির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা এখনো জানতে পারিনি। কারণ উদ্ঘাটনের জন্যই তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে তুষ্টির মৃত্যুর মূল কার খোঁজে বের করে আমাদের জানাবে। তবেই আমাদের অন্তর কিছুটা শান্তি পাবে।

তুষ্টির সহপাঠী রাজু জানান, তুষ্টি ছিল আমাদের সবচেয়ে ভালো একজন বন্ধু। তার মৃত্যুটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। যদি তার স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে তাহলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি।

প্রতিবেশী শেখ জালাল আহমেদ বলেন, তুষ্টি শুধু তার পরিবারেরই গর্ব ছিল না। সে ছিল আমাদের এলাকাবাসীরও গর্ব। মেয়েটা অকালে মারা যাওয়ায় আমরা দারুণভাবে শোকাহত। তুষ্টির মৃত্যুর আসল কারণ আমরাও জানি না। এটা জানা খুবই দরকার।

স্থানীয় সুখারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন খোকন তালুকদার বলেন, ‘তুষ্টির মতো মেয়েই হয় না। সে আমার পুরো ইউনিয়নের গর্ব ছিল। আমরা সবাই তার মৃত্যুর মূল কারণ জানতে চাই এবং যদি তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে তবে এর ন্যায় বিচার চাই।’

উল্লেখ্য, করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ইসরাত জাহান তুষ্টি ও কয়েকজন সহপাঠীসহ ঢাকার আজিমপুর এলাকার সরকারি কোয়ার্টারের একটি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে আসছিল। গত শনিবার (৫ জুন) মধ্যরাতে তাঁর এক রুমমেট তুষ্টিকে ওই বাসার বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে। রোববার (৬ জুন) সকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাথরুম থেকে শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টির মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত