Ajker Patrika

৫ হাজার ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মী শামসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ১২
Thumbnail image

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন একেএম শামসুজ্জামান। নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পাঁচ হাজার ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। ৩০–৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা এসব সনদ দেওয়া হতো বোর্ডের আসল শিটে এবং আপলোড করা হতো বোর্ডের ওয়েবসাইটে। 

পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে সার্চ দিলে এসব ভুয়া নম্বরপত্র ও সনদ আসল হিসেবেই দেখা যায়। বোর্ডের গোপন কক্ষ থেকে এসব সনদের ফাঁকা সিট এনে নিজের বাসায় বসে সেগুলো পূরণ করতেন শামসুজ্জামান। 

আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে পীরেরবাগে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভুয়া সনদ, নম্বরপত্র ও ফাঁকা সিটসহ শামসুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। এ সময় কাছাকাছি দুটি ভিন্ন বাসায় তাঁদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার আসল সনদ, ফাঁকা নম্বরপত্র, তৈরি করা শতাধিক সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট, জীবনবৃত্তান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে। 
 
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র–ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তিনি দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের চেয়ে দুর্নীতি মূলক কাজ করার জন্যই বেশি আগ্রহী ছিলেন।

সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, কতজন ফরম পূরণ করে রোল নম্বর পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, কতজন কৃতকার্য হয়েছে, কতজন অকৃতকার্য হয়েছে সব তথ্যই তাঁর কাছে থাকত।

এ বিশাল তথ্যভান্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অথোরিটি, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতি মাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তাঁর সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছেন। 

একেএম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালে। তিনি অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন।

দালালেরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতেন যে—তাঁরা যে অরিজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দেবেন তা অনলাইনে ভেরিফায়েড হবে।

২০১৭ সালে এসব অপকর্মের অভিযোগে শামসুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে চাকরিতে পুনর্বহাল হন। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করবে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত