Ajker Patrika

সিআইডির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

গুলশান-বাড্ডা (ঢাকা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে এসে বাসার ছাদে বিদ্যুতায়িত হন খায়রুল নামের এক যুবক। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চার দিন পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ফরেনসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতায়িত হয়ে খায়রুলের মারা গেছেন।

কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত করতে এসে সিআইডি বলছে, দুর্ঘটনায় নয়, কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে খায়রুলকে। আর এই কাজটি করেছেন রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকারই ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী (৪৬)। কিন্তু ইয়াকুব আলীর অভিযোগ—মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা।

খায়রুলের মৃত্যুর পাঁচ দিন পর বাবা আব্দুল কুদ্দুস সিকদার ১ জুলাই ২০২০ সালে বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই বছরের ২০ জুন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গেলে মেয়ের বাবা নাদিম আহমেদসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন পিটিয়ে খায়রুলকে পাশের বাড়ির ছাদে ফেলে রাখেন। পরবর্তী সময়ে থানা-পুলিশ হয়ে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ঘটনার তদন্তে নেমে চলতি বছরের ১০ জুন দিবাগত রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এলাকার বেকারি ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলীকে। সিআইডির কর্মকর্তারা দাবি করেন, নিহত খায়রুল ইসলামকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর ইয়াকুব এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কেরোসিন নিয়ে এসেছিলেন। পরে এক দিন রিমান্ড শেষে ইয়াকুবকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

হত্যা মামলার অভিযুক্ত ইয়াকুবের অভিযোগ, সেই রাতে তাঁকে আটকের পর সিআইডি কার্যালয়ে ৬০ ঘণ্টা আটক রেখে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা। কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা না দিতে পারায় তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। এরপর জামিনে বেরিয়ে অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে তিনি পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি সদর দপ্তরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন।

 অভিযোগে ইয়াকুব উল্লেখ করেন, এই মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু সিআইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে সিআইডির দুজন কর্মকর্তা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করেন। অবশ্য অভিযোগ ওঠা সিআইডির ওই দুই কর্মকর্তা বলছেন, কথিত প্রেমিকার মা ও প্রেমিকার দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযুক্ত ইয়াকুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কিন্তু খায়রুলের সেই কথিত প্রেমিকার মা সাহেলি বেগম বলেন, ‘সিআইডি আমাকে ও আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক অত্যাচার করেছে। তারা বলেছে, আমরা যেন ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে তাদের শেখানো কথা অনুযায়ী সাক্ষ্য দিই। পরে ভয়ে আমরা জবানবন্দি দিয়েছি।’

জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. খালিদুল হক হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মা এবং মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই ইয়াকুব আলীর সংশ্লিষ্টতা আছে বিধায় এ মামলায় তাঁকে আটক করা হয়। আর টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দোলন মজুমদার বলেন, ‘আমি আর এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নেই। অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। আমরা জোর করেও কারও বিরুদ্ধে জবানবন্দি করাইনি।’

অন্যদিকে গত ২৭ জুলাই ২০২১ সালে নোটারি পাবলিকের হলফনামায় কথিত প্রেমিকা ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাসুদ উর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেন, তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইয়াকুবের নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সিআইডির কর্মকর্তারা তাঁদের চাপ দিয়েছিলেন। ইয়াকুব আলীর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে ২৭ জুলাই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ উর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন, সেখানে ইয়াকুব আলীর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে কোনো তথ্য দেননি ওই কথিত প্রেমিকা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত