Ajker Patrika

স্বামীর রক্তে লাল শরীর দেখে জ্ঞান হারান আকলিমা

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৩: ৪১
Thumbnail image

সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু (৩৬) অর্থ জমিয়ে ও বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে গাড়ির একটি ছোটখাটো গ্যারেজ দিয়েছিলেন। তবে এর আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তাই পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। অনেক কষ্টের পর পেয়েছিলেন শ্রমিক ভিসা। কেটেছিলেন বিমানের টিকিটও। কিন্তু সিংগাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার তিন দিন আগে গত ২১ জুলাই রোববার রাত দেড়টায়  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ রাজু। 

গত ২০ জুলাই শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে দেখতে গিয়ে মাথায় গুলবিদ্ধ হন রাজু। বন্ধুরা প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে মারা যান তিনি। ওই দিন গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দাফন করা হয় তাঁকে। অথচ বুধবার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বিমানে চাপার কথা ছিল তাঁর। 

এসব তথ্য জানান নিহত রাজুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার (৩১)। 

সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে। বাবা মৃত সৈয়দ আব্দুল করিম। 

রাজুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার (৩১) আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার স্বামী কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি যখন গ্যারেজ থেকে বাসায় ফিরতেন, সব সময় তাঁর হাতে কালি লেগে থাকত। সংঘর্ষের দিন দুপুরে বাসায় খেতে আসেন। খাওয়া শেষে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে বাড়ির ছাদে যান, কী হয়েছে দেখতে। ছাদ থেকে দেখেন অনেক সাধারণ মানুষ সড়কের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ায়ে আছে। তিনি ছাদ থেকে নেমে বাইরে যান দেখতে। তখন হঠাৎ তাঁর পাশে একজন গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে ধরতে যান। ঠিক তখনই তাঁর মাথায় এসে একটি গুলি লাগে। গুলি খাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে বাসার নিচ পর্যন্ত আসেন। তখন তার শরীর রক্তে সম্পূর্ণ লাল হয়ে আছে। সেটা দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ 

আকলিমা বলেন, বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১১টায় ডাক্তার অপারেশন করে তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেয়। পরে অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নিয়ে যান ডাক্তাররা। সেখানে নেওয়ার এক দিন পর রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। সিদ্ধিরগঞ্জে একটি জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করি।

রাজু রাজনীতি করতেন না বলে জানান তাঁর স্ত্রী। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ২০০২ সালে জীবিকার তাগিদে খুব অল্প বয়সে গ্রাম ছেড়ে আসেন ইট-পাথরের শহরে। নারায়ণগঞ্জে নিজের পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি বাড়িতেও টাকা পাঠাতেন। 

আকলিমা আরও বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে আয়েশা মাদ্রাসায় আবাসিকে থাকে। আয়েশা তার বাবাকে বাসায় সুস্থ দেখে যায়। কিন্তু ফিরে দেখে বাবার নিথর দেহটি শোয়ানো আছে মসজিদের খাটিয়ায়। জানি না, এই সন্তানদের নিয়ে বাকি পথটা কীভাবে চলব। সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন। আমি যেন আমার এই তিন সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে খেয়ে থাকতে পারি।’ 

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সাহায্য করেছেন আজকের পত্রিকার লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত