Ajker Patrika

মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, সড়কে গাড়ি ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৪: ০৬
Thumbnail image

ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের ওপর আওয়ামী লীগ-যুবলীগের হামলা এবং তাদের হামলায় তিন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে নিহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশের দাবিতে ফের বিক্ষোভ শুরু করেছেন পোশাক শ্রমিকেরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা আজ বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় সড়কে এক চিকিৎসকের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। 

সকাল ৯টা থেকে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে শ্রমিকেরা এসে ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নেন। এ ছাড়া কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে মিরপুর ১, ২, সাড়ে ১০, কচুক্ষেত এলাকায়ও অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে মিরপুর ২ নম্বর বড়বাগ এলাকায় দেশ অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। 

সকাল থেকে ১০ নম্বর গোল চত্বরে লাঠি হাতে অবস্থান নিয়ে তাঁরা সড়কের প্রতিটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছেন। এই সড়কে এখন রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরবাইক চলাচল করলেও বড় কোনো বাস চলাচল করতে পারছে না। 

আন্দোলনরত আক্তার হোসাইন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘একজন শ্রমিক যদি ৮ হাজার টাকা বেতন পান, তাঁর পরিবারে যদি পাঁচজন সদস্য থাকে, বাসা ভাড়াতেই তো চলে যায় ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকায় কীভাবে সংসার চলবে। বাজারদরের যে অবস্থা। তাতে তো দুবেলা ভাত খাওয়ার অবস্থা নেই। আমরা কীভাবে বাঁচব। কয়েক টাকা বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু এখন জীবন নিয়ে টানাটানি।’ 

এদিকে আন্দোলনে মালিকপক্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক লোকদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা করিয়েছে অভিযোগ তুলে আসমা আক্তার বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকেরা নিজ নিজ কারখানার সামনে আন্দোলন করছিলেন। পরে কয়েকজন বহিরাগত এসে হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।’ 

লাঠি হাতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকাপুরো মিরপুরে ২৩৫টি গার্মেন্টস আছে। প্রায় প্রতিটি গার্মেন্টস থেকে আসা শ্রমিকেরা মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নিতে থাকেন সকাল থেকেই। সকালে শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ায় অবস্থান নেওয়া শ্রমিকেরা পরবর্তীতে ১০ নম্বর গোলচত্বরে এসে অবস্থান নেয়। 

তবে পুলিশকে শ্রমিকদের অবস্থানের ব্যাপারে নমনীয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কথা হয় পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। এটা তাঁদের ন্যায্য দাবি। এই দাবি পূরণে সংশ্লিষ্টরা কথাও বলছেন। তাঁদের দাবি পূরণ হলেই রাস্তা ছেড়ে চলে যাবেন।’ 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক হত্যা ও হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক হত্যার মতো কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। আন্দোলনরত শ্রমিকদের কোনো নেতা বা নেতৃত্বদানকারী সংগঠন নেই। তাই তাঁরা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করছেন। শ্রমিক হত্যার বিষয়টি গুজব বলেই মনে করি। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আপনারা শুনেছেন, সেটা নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। আমরা অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শ্রমিক নিহতের ক্ষেত্রেও তাঁরা মামলা করতে চাইলে সঠিক তদন্তের স্বার্থে আমরা সেটিও নেব। কিন্তু কেউ কোনো মামলা ও অভিযোগ করছে না।’ 

বিক্ষোভ ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ডিসি জসিম বলেন, ‘আমরা বিষয়টা নজরদারি করছি। এটা পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের ধরন। তারা খুব একটা ভায়োলেন্ট নয়।’ 

এদিকে ছবি কিংবা ভিডিও করতে গেলেই শ্রমিকদের আক্রোশের শিকার হচ্ছেন দায়িত্বরত সাংবাদিক ও অন্যান্য সাধারণ মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত