Ajker Patrika

সালথায় আকিকার মাংস নিয়ে দ্বন্দ্ব: ৩০ বাড়ি ভাঙচুর, লুট

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লোক ভাড়া করে এনে শনিবার প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লোক ভাড়া করে এনে শনিবার প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় আকিকার মাংস ভাগাভাগি নিয়ে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্ব থেকে হিংসা প্রতিহিংসা ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আধিপত্য ধরে রাখতে সর্বশেষ এক পক্ষ সহস্রাধিক লোক ভাড়া করে এনে প্রতিপক্ষের অন্তত ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তর ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি আকিকার মাংস ভাগাভাগি নিয়ে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের উজ্জল মোল্যার সঙ্গে তাঁর আপন ভাই ফারুক মোল্যার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জেরে উজ্জলের ছেলেকে জুতাপেটা করেন ফারুক। তাঁদের মধ্যে উজ্জল মোল্যা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফরহাদ মোল্যার সমর্থক আর ফারুক মোল্যা জালাল মাতুব্বরের সমর্থক। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। উত্তেজনার মধ্যেই যুবলীগ নেতা ফরহাদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নুকে সমর্থন করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সালথা সরকারি কলেজের বাংলা প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল।   

শনিবার সকালে প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল পাশের যুদনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া, সোনাপুর ও রঙ্গরায়েরকান্দী গ্রাম থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সহস্রাধিক লোক এনে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের জালাল মাতুব্বরের সমর্থকদের অন্তত ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় আব্দুল হাই নামের এক ব্যক্তির একতলা বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং দুটি ঘর ভাঙচুর করা হয়।

এ ছাড়া রাঙ্গারদিয়া গ্রামের খোকন মোল্যার ৩টি, রোকন মোল্যার ৩টি, মান্নান মোল্যার ৩টি, রফিকের ২টি, মাসুদের ১টি, নুরুল ইসলামের ২টি লিয়াকতের ৪টি, ইলিয়াসের ২টি, ইদ্রিসের ২টি, ওবায়দুর খাঁর ২টি বসতঘরসহ অন্তত ৩০টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুট করা হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির নারী ও শিশুরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।

ক্ষতিগ্রস্ত মান্নান মাতুব্বর বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। তবে ২০১৪ সালে বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ আমার বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর থেকে যুবলীগ নেতা ফরহাদ ও তার সমর্থকেরা আমার বাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে। আমার কয়েকটি গরুও নিয়ে গেছে। শনিবার সকালে কোনো কারণ ছাড়াই প্রভাষক জয়নাল ও যুবলীগ নেতা ফরহাদ খারদিয়া, রঙ্গরায়েরকান্দী ও সোনাপুর থেকে শত শত লোক ভাড়া করে এনে অতর্কিতে আমার বাড়িসহ অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুটতরাজ করে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লোক ভাড়া করে এনে শনিবার প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লোক ভাড়া করে এনে শনিবার প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে এই হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল বলেন, ‘হামলা হয়েছে আমার পাশের গ্রামে। আকিকার মাংস ভাগাভাগি নিয়ে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের নান্নু মাতুব্বর ও জালাল মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির জেরে ওই হামলা হয়েছে। অতএব এই হামলার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত না।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কয়েক গ্রামের লোক এসে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের একটি পক্ষের লোকজনের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত