Ajker Patrika

অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতকের মৃত্যু: সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তদন্ত কমিটি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিন্ডিকেটের বাধায় শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন মো. রেহান উদ্দিন তিন সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেন।

কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল বিধান মোহা. সানাউল্লাহকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার কাওছার আহমেদ।

অপরদিকে এ ঘটনায় করা মামলায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ানের ছেলে সবুজ দেওয়ানকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাকিব হোসেন এই আদেশ দেন।

শরীয়তপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শিমুল বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের নূর হোসেন সরদারের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুমা বেগমকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

বেলা ৩টার দিকে অপারেশনের মাধ্যমে রুমা বেগম পুত্রসন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে স্বজনেরা নবজাতককে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখান।

চিকিৎসকের পরামর্শে নবজাতককে সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে স্বজনেরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালের সামনে থেকে অল্প টাকায় ঢাকাফেরত একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন।

রোগী নিয়ে ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে আবু তাহের দেওয়ান, তাঁর ছেলে সবুজ দেওয়ানসহ সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সটির গতিরোধ করেন। তাঁরা চালককে মারধর করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেন।

এ সময় রোগীর স্বজনেরা অনুনয়-বিনয় করলেও চক্রটি কর্ণপাত করেনি। তাদের দাবি, তাদের সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে রোগী নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় তারা কিছুতেই ঢাকাফেরত অ্যাম্বুলেন্সটিকে রোগী নিয়ে যেতে দেবে না। প্রায় ৪০ মিনিট আটকে রাখার পর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই নবজাতকটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এ ঘটনায় নবজাতকের বাবা নূর হোসেন সরদার বাদী হয়ে সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ান, তাঁর ছেলে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার সবুজ দেওয়ানসহ চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার পর পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গতকাল শনিবার ভোরে সদর উপজেলার বেড়া চিকুনদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে সেলিম শেখের বাড়ি থেকে মামলার ১ নম্বর আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, সিভিল সার্জনের গাড়িচালক ও মামলার ২ নম্বর আসামি আবু তাহের দেওয়ান গত বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিনের ছুটিতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মো. রেহান উদ্দিন বলেন, গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ানের বিরুদ্ধে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বাধা দেওয়া এবং বাধার মুখে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই নবজাতক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, বাধার মুখে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। আজ শুনানি শেষে আদালত আসামি সবুজ দেওয়ানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত