Ajker Patrika

বিলম্ব সঙ্গী করেই রেলে ঈদযাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ১৬: ৫৪
বিলম্ব সঙ্গী করেই রেলে ঈদযাত্রা শুরু

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে। ঈদযাত্রার প্রথম ট্রেন ছিল রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস। প্রথম ট্রেনটিই কমলাপুর ছেড়ে যায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে। সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে যায়। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের হিসাবে দেরিতে ছেড়েছে ৬টি ট্রেন। আজ মোট ৩৭টি ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর প্রথম দিনই দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা।

এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শিডিউল বিপর্যয় মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, দেরিতে ট্রেনগুলো স্টেশনে আসায় সেগুলো দেরি করে ছেড়েছে। শিডিউল মেনে ট্রেন ছাড়ার বিষয়ে তাঁদের প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদযাত্রার বাকি দিনগুলোতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রা করতে পারবে বলে স্টেশন কর্তৃপক্ষের আশা।

ঈদযাত্রার প্রথম দিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মজীবী অনেকেই আগেভাগে পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চিলাহাটিগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। সেটি এক ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়ে যায়। রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ সকাল ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা দেড় ঘণ্টা দেরিতে সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশন ছাড়ে। খুলনাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ সকাল সোয়া ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশন ছাড়ে। এ ছাড়া দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ২৫ মিনিট, রংপুর এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট দেরিতে স্টেশন ছেড়ে গেছে। তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বেলা ১১টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায়।

মোহাম্মদপুর মডেল কলেজের ছাত্র পাভেল ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ছাত্র ইফতেখার দুই বন্ধু। একসঙ্গে ঈদ করতে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে জামালপুর যাচ্ছে। ট্রেন ছাড়তে দেড় ঘণ্টা দেরি হওয়ায় খুবই বিরক্ত তারা। পাভেল বলে, ‘এমনিতেই রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে। তাই আরামদায়ক হবে ভেবে ট্রেনে যাত্রা করা। কিন্তু ট্রেন যদি এক ঘণ্টা দেরি হয়, তাহলে তো ভোগান্তির শেষ নেই। অনেক কষ্ট করে টিকিট পাইতে হইছে। তার ওপর রেলওয়ে সেবা অ্যাপ দিয়ে তো লগ ইন হচ্ছে না।’

সঙ্গে চারজন বন্ধু নিয়ে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ট্রেনে ময়মনসিংহে যাবেন মাদ্রাসাছাত্র মো. সালমান। ট্রেনটি ছাড়তে দেরি হয়েছে এক ঘণ্টা। দীর্ঘ এই সময় ট্রেনে বসেই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ট্রেন যদি এভাবে দেরি হয় তাহলে তো ভোগান্তি বাড়বে। কুমিল্লা থেকে আসছি, এখন যদি বাড়ি যেতে দেরি হয়, বাড়ির লোকজন চিন্তায় থাকবে।’

তাবাসুম ইসলাম কিশোরগঞ্জে যাচ্ছেন ঈদ উদ্‌যাপন করতে। বলেন, ‘ট্রেন ১০ মিনিট লেট করে ছেড়েছে এতে আমি উদ্বিগ্ন না। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যেতে পারছি এটাই আনন্দের।’

মো. আলিফ কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে নিজের বাসা থেকে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন। তিনি যখন সার্ভারে প্রবেশ করেন, তখন ১৬ হাজার লোক পেন্ডিং দেখাচ্ছিল। ঈদযাত্রায় তাঁর অনুভূতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২২ ঘণ্টা না দাঁড়িয়ে অনলাইনে সহজে টিকিট কাটতে পেরে আমি আনন্দিত। এ ছাড়া বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যেতে পারছি এ জন্য খুব ভালো লাগছে।’ 

কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকিট কাটছেন যাত্রীরা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘স্টেশনে ট্রেন বিলম্বে আসায় ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়ার সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে বা দুর্ঘটনা না হলে আমরা ঈদযাত্রার বাকি দিনগুলোতে ঠিক সময়েই ট্রেন ছাড়তে পারব।’ 

এই ব্যবস্থাপকের দাবি, এখন পর্যন্ত সবগুলো ট্রেনই শিডিউল অনুযায়ী ছেড়েছে। শুধু রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস—এই তিন ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছেড়েছে। এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলে না। এটা অপারেশনাল বিলম্ব ছিল। সামনের দিনগুলোতে এগুলোও নির্ধারিত সময়ে ছাড়বে বলে তাঁর আশা। 

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘গতকাল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে একটি ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটে। সে কারণে ট্রেন ঢাকায় আসতে দেরি হয়েছে। এখান থেকে ছাড়তেও দেরি হয়েছে। যেসব ট্রেন এক ঘণ্টা দেরি করছে, তা স্বাভাবিক। এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলা চলে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন সকালের ট্রেন বিকেলে, বিকেলের ট্রেন রাত ১২টায় বা পরের দিন ছেড়েছে। এখন সে অবস্থা নেই। মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ করাই এখন লক্ষ্য। সবাই আনন্দ করার জন্যই বাড়ি যাচ্ছে, এতে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এসব বিবেচনায় ট্রেনগুলো একটু সময় নিয়ে চালানো হয়।’ 

ঈদে রেল দুর্ঘটনার বিষয়ে এই স্টেশনের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘অনেকেই ঈদযাত্রায় ট্রেনে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রতিটি স্টেশনে বলা আছে, যেন যাত্রীরা নিরাপদে নামতে পারে এবং কেউ যেন ট্রেনের ছাদে উঠতে না পারে। কয়েক মিনিট বিলম্ব হলেও যাত্রীরা যেন নিরাপদে ওঠানামা করতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’ স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরার বিষয়ে মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মাস্ক পরার বিষয়ে যাত্রীদের বলা হচ্ছে। যাত্রীদের কতটা সচেতন, তারা কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত