Ajker Patrika

স্বল্প সময়ে এত বিয়ে আর দেখেনি ঘিওরবাসী

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ২০
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ঈদের পর যেন বিয়ের ধুম পড়েছে। শনিবার ঈদের ছুটির সঙ্গে ছুটি তিন দিন বাড়িয়ে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত শতাধিক বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া সুন্নতে খতনা, মুখে ভাতসহ নানা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদে আত্মীয়স্বজনকে একসঙ্গে পেয়ে উপজেলাজুড়ে এসব আয়োজন করা হয়।

ইউনিয়নভিত্তিক বিয়ে নিবন্ধনকারী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পরদিন রোববার থেকে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলায় ১০৩টি বিয়ের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বানিয়াজুরী ইউনিয়নে ১২টি, পয়লায় ১৩, সিংজুরীতে ১৪, বড়টিয়ায় ১০, নালী ইউনিয়নে ১০, ঘিওর সদরে ১৪টি এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে ১৫ জোড়া দম্পতির বিয়ের আয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীর অন্তত ১৫টি বিয়ে সম্পন্ন হয়।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা ও জেলা সদরের পারলার, ডেকোরেটর, ফুলসহ বিয়েকেন্দ্রিক সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ভিড়। বিয়ে, গায়েহলুদ, খতনাসহ নানা অনুষ্ঠানকে ঘিরে চলছে প্রয়োজনীয় সাজগোজের আয়োজন।

এদিকে একসঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠান থাকায় ঝামেলায় পড়েছেন ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা। ঘিওরের বানিয়াজুরী বাজারের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে দু-তিনটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি। কিন্তু এবার ঈদের পরদিন থেকে লাগাতার বিয়েসহ অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানের চাপ বেশি। শ্রমিকেরাও সবাই কাজে ফেরেনি। তাই পরিচিতজন হলেও অর্ডার নেওয়া যাচ্ছে না।’

সন্তানের বিয়ের আয়োজন করা বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বছরের দুটি ঈদের ছুটিতে আত্মীয়দের একসঙ্গে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রোজার ঈদে অনেকেই বাড়ি আসেন। তাই বিয়েসহ বিভিন্ন আয়োজনের জন্য এ সময়টিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে স্বল্প সময়ে এত বিয়ে এলাকার কেউ আগে আর দেখেনি।

এ বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য স্থানীয় রুহিদাস পুরোহিত বলেন, লগ্ন ভালো থাকায় এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের শুভদৃষ্টি সম্পন্ন করছেন। ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজন ও চাকরিজীবীরা এলাকায় অবস্থান করায় অভিভাবকেরা এ সময়টিকে বিয়ের জন্য বেছে নিয়েছেন।

গায়েহলুদে কনের বাড়িতে বরের স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলার সাহিলী গ্রামের রেখা আক্তার বলেন, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ডেকোরেটর, মাংসের দোকান ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় ও জোগাড় করতে হয়েছে বেশি দাম দিয়ে।

উপজেলা সদরের একটি পারলারের পরিচালক সানজিদা আক্তার বলেন, ‘ঈদের সময় এমনিতেই সাজসজ্জার কাজ বেশি থাকে। তার ওপর একাধিক বিয়ের আয়োজন নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’

এদিকে একসঙ্গে একাধিক দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন অনেকে। মুনিঋষিপাড়ার দুর্লভ দাস বলেন, ‘বৃহস্পতি ও শুক্রবার—এই দুই দিন ছিল আমার মেয়ের বিয়ের আয়োজন। তবে একই দিনে আমাদের পাড়ায় আত্মীয় বাড়িতে একাধিক অনুষ্ঠান থাকায় অনেকেই নিমন্ত্রণে আসতে পারেননি।’

রাথুরা গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘একসঙ্গে নিকটাত্মীয়দের তিনটি বিয়ে ও একটি সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানের দাওয়াত ছিল। কার বাড়িতে যাব, কে খুশি হবে, আর কে বেজার হবে—ভেবে মুশকিলে পড়েছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যরা ভাগ হয়ে চার দাওয়াতই রক্ষা করেছি।’

বউভাত অনুষ্ঠানে মেহমানদের একাংশ। ছবি: আজকের পত্রিকাঘিওর সদরের ইউরোপপ্রবাসী নূরুজ্জামান বলেন, ‘এবার ঈদে দেশে এসেছি মূলত ভাতিজির বিয়ে ও শ্যালকের ছেলের মুখে ভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামাজিক অনুষ্ঠানে সময়টা দারুণ উপভোগ করছি।’

উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের বিয়ের কাজি অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লোকজন সরকারি ছুটিকে ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিচ্ছেন। ঈদের পর পাঁচটি বিয়ে নিবন্ধন করেছি। বিয়ে আরও বেশি হয়েছে। আমরা শুধু এলাকার মেয়ের বিয়ের নিবন্ধন করি। ছেলেদের নিবন্ধন তাঁর শ্বশুরবাড়ি এলাকার কাজি করান। এ ছাড়া অনেক বিয়ে আদালতে সম্পন্ন হয়।’

ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের পর দিন থেকে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১২টি দাওয়াত পেয়েছি। প্রতিদিনই একাধিক অনুষ্ঠান। সব জায়গায় সময়মতো উপস্থিত হতে পারিনি। তবে আমার পরিবারের সদস্যরা সবার বাড়ি গিয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও দেখা করে আসছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত