Ajker Patrika

টিভিসিতে আকৃষ্ট ক্রেতারা, শত শত কোটি টাকার প্রতারণা জামানের  

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৪৪
টিভিসিতে আকৃষ্ট ক্রেতারা, শত শত কোটি টাকার প্রতারণা জামানের  

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শত কোটির অধিক টাকা আত্মসাৎ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে উঠেছে জিয়াউদ্দীন ওরফে জামান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত জামান ১২টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রচারণা করতেন। এসবের আড়ালেই তার শত শত কোটি টাকা প্রতারণার গল্প। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরা থেকে জামানকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।

সংস্থাটি বলছে, গ্রেপ্তারের সময় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জাল নোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট ও জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আরো ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাসংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামান জানিয়েছেন, তিনি ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেডসহ নানা পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন। পরে ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছে থেকে কয়েক শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এইভাবে ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে তিনি শতাধিক ভুক্তভোগীর নিকট থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। মূলত ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপণ, ভুয়া কোম্পানি ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া সাজানো ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপণন কেন্দ্র এবং ভুয়া কৃষি খামার ইত্যাদিতে দেখিয়ে জিয়াউদ্দীন জামানকে সরলভাবে বিশ্বাস করে ব্যবসায়ীরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে তাঁর উল্লেখযোগ্য অংশ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করেন। 

জামান র‍্যাবকে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন। এ ছাড়া বিদেশি দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। এভাবে অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। পরে ২০১৪ সাল থেকে ফোসান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে তিনি বিদেশে অর্থ পাচার করেন। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছেন। 
 
র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি প্রতারণার কৌশল হিসেবে ব্যবসায়ীদের দামি ও আকর্ষণীয় গিফট প্রদান করতেন। পরে তাঁদের  বিদেশে তাঁর তথাকথিত ভুয়া মালিকানাধীন টাইলস ফ্যাক্টরিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতেন। ওই সব ফ্যাক্টরির অফিসের পরিদর্শনযোগ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ প্রদান করতেন। তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে এ ধরনের ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীসহ খ্যাতনামা অনেককেই প্রলুব্ধ করতেন। কারসাজি হিসাবের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দেশে উৎপাদিত পণ্যের লাভ দেখিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করতেন। 

খন্দকার মঈন বলেন, তিনি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে মাধ্যমে টাইলসে ফোসান সিরামিকের লোগো খোদাই করে নিজের ফ্যাক্টরি থেকে তৈরিকৃত বলে প্রচার করে বাংলাদেশে ব্যবসা করতেন। তাঁর চারটি ব্র্যান্ডের সিরামিকস বা টয়লেট সামগ্রীর ব্যবসার আড়ালে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতেন। প্রতারণার অর্থ থেকে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি কিনেছেন, যার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যাংক লোন নেন। দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট এবং বিদেশে তিনটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬০-৭০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮-২০টি মামলা রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তামিম কি তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হবেন

‘আমি আধুনিক পুলিশ, সাংবাদিকদের ভয় করে চলি না’

লন্ডনের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা, ফ্লাইট বাতিলে ভোগান্তিতে হাজারো যাত্রী

নারীর ‘বগলের গন্ধ’ পুরুষের মানসিক চাপ কমায়, তবে কি মানুষেরও আছে ফেরোমোন!

মহড়া দিয়ে রাকসু দখলের স্বপ্ন না দেখার পরামর্শ ছাত্রদল নেতার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত