Ajker Patrika

মালিবাগ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় নড়েনি একটি গাড়িও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৭: ৩৩
মালিবাগ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় নড়েনি একটি গাড়িও

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে রামপুরা ব্রিজে পৌঁছায় ডেমরা থেকে ছেড়ে আসা আসমানি পরিবহন। এরপর আর এক ইঞ্চিও আগাতে পারেনি বাসটি। ৩০ মিনিট পর সব যাত্রী নেমে গেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (২টা ৩০ মিনিট) রামপুরা ব্রিজেই অপেক্ষারত ছিল বাসটি। 

শুধু আসমানি পরিবহন নয়। রামপুরা-কুড়িল সড়কে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আটকে আছে শত শত গাড়ি। এই যানজট রামপুরা থেকে মালিবাগের দিকে চলে গেছে, বিপরীতে মেরুল বাড্ডা। আর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে ইউলুপের যানজট ছাড়িয়েছে দক্ষিণ বনশ্রী পর্যন্ত। 

আজ বুধবারে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফল এই যানজট। 

আসমানি পরিবহনের চালক আসাদুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাই ঘুমাচ্ছি। অনেক আগেই যাত্রী নেমে গেছে। শুনেছি সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তা আটকে থাকবে। তাই কোনো উপায় নাই। এখান থেকে একটুখানিও আগানো যাবে না।’ 

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাস থেকে নেমে গেছেন সব যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকাআজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। সেখানে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দল হয়ে মৎস্য ভবন, পরীবাগ মোড়, বাংলামোটর মোড়, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটের দিকে ছড়িয়ে পড়েন। একই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার বিভিন্ন মোড় অবরোধ করেন। 

জানা যায়, আজ ঢাকার ভেতরে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, ফার্মগেট, চানখাঁরপুল মোড়, চানখাঁরপুল ফ্লাইওভারে ওঠার মোড়, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, আগারগাঁও, ঢাকার বাইরে রাজশাহী (জিরো পয়েন্ট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, রেলগেট, স্টেশন বাজার), চট্টগ্রাম ও বিভাগীয় শহরগুলোতেও চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’। 

রামপুরা ইউলুপে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ পরিবহনের চালক মো. জাকির উদ্দিন খালিফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঝে এক দিন ঠিক থাকল, আবার আজ থেকে শুরু। সরকার আসলে কী করতাছে জানি না। তবে ছাত্রগো দাবি যদি ঠিক থাকে, তাইলে মাইনা নেওয়া উচিত।’ 

এরই মধ্যে জাকির উদ্দিন এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান—এই যানজট কখন ছাড়বে? ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত’ জানার পর তিনি একটু হতাশ হলেন! আশপাশে খাবারের হোটেল কোথায় জিজ্ঞাসা করে হাঁটা দিলেন সে পথেই। 

যানজটে আটকে থেকে সিটে গা এলিয়ে ঘুমাচ্ছেন বাসের চালক, হেলপার, সুপারভাইজার। ছবি: আজকের পত্রিকা  বাসের পাশেই টঙ্গী যাবেন কামাল হোসেন নামে এক প্রাইভেট কারের যাত্রী। কামাল বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এই রুটের বেশির ভাগ যাত্রীর গন্তব্য কুড়িল, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, বোর্ড বাজার। কিন্তু এত দূরত্বে যাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই।’ 

হাসান উদ্দিন নামে কুড়িলগামী এক যাত্রী বলেন, ‘বাস থেকে নামছি অনেক সময় আগে। কিন্তু উল্টো পথে রিকশা নিয়ে যাব, সেই উপায় নাই। ভাড়া চায় ৩০০ টাকা। তাও যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত যাবে।’ 

শুধু বাস ও মোটরযান নয়, ব্লকেডে আটকা পড়েছে রিকশাও। জমির নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘এমন গ্যাঁড়াকলে আছি মামা, একটু বাইর হতে পারতাছি না। বাইর হইলেই উল্টা দিক দিয়া বাসায় যামু গা। আগে তো জানতাম না এমন হইব।’ 

বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়কপথের পাশাপাশি রাজধানীর রেলপথও অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে দুই ঘণ্টা ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার দুপুরে ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

স্টেশন মাস্টার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করে রেখেছেন। দুই ঘণ্টা ধরে ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন ছাড়া হচ্ছে না।’ 

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে আছে রিকশা, বাস। ছবি: আজকের পত্রিকাসরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে কারওয়ান বাজার ও মহাখালী রেলগেট এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেললাইনের ওপরে কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশ ফেলে অবরোধ করেছেন। এ সময় কারওয়ান বাজার রেললাইনের ওপর শুয়ে অবরোধ করতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া রেল ক্রসিংয়ের ব্যারিকেডের গেট ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এতে রেলগেট দিয়ে কোনো যানবাহনও চলাচল করতে পারছে না। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়িগুলো চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। 

আজ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে মিছিলসহ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে তাঁরা এখানে অবস্থান নেন। 

শাহবাগ ব্লকেডের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, আদালতের কাছে দাবি ছিল, এখন আর নেই। এখন আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত