Ajker Patrika

আকবর আলি খান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সম্মান পাননি: ড. দেবপ্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আকবর আলি খান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সম্মান পাননি: ড. দেবপ্রিয়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ড. আকবর আলি খান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সম্মান পাননি বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

আজ সোমবার বিকেলে আকবর আলি খান স্মরণে এক ওয়েবিনারে এ কথা জানান তিনি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসএএনপিএ) যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। 

সভায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ড. আকবর আলি খান সাহেবের মৃত্যুর পর আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাঁর সহকর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মানটা দেওয়া হয়, সেটা উনি পেয়েছেন। কিন্তু এর বাইরে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মূল ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো শোকপ্রস্তাব আসেনি। এটা নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের আক্ষেপ বা দুঃখ রয়ে গেছে।’ 

অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন ড. আকবর আলি খান। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আকবর আলি খান, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী এবং সিএম শফি সামি এক যোগে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনা উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘তাঁরা যদি সেই দিন পদত্যাগ না করতেন তাহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের চেহারাটা হয়তো ভিন্ন হতে পারত। তাঁদের পদত্যাগের পর এক এগারোর পরিস্থিতি তৈরি হলো এবং একটা সর্বজনীন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসে। তাঁদের এই অবদানটা এখনো ইতিহাসে সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়নি। দুঃখের ব্যাপারটা হল ওই দিন তাঁদের পদত্যাগের ফলে যে রাজনৈতিক শক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিল, আকবর আলি খানের মৃত্যুতে সেই রাজনৈতিক শক্তি ওনার প্রতি যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান প্রকাশ করল না।’ 

ওয়েবিনারে বক্তারা আকবর আলি খানের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, আকবর আলি খানের বহুবিধ পরিচয় আছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, প্রশাসনিক মানুষ হিসেবে যারা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাদের পুরোধা ছিলেন তিনি। যুদ্ধকালে এসডিও থাকা অবস্থায় তিনি সরকারি খাজাঞ্চি খানা থেকে তিন কোটি টাকা নিয়ে মুজিবনগর সরকারকে সাহায্য করেছিলেন। এই কাজের জন্য তাঁর অনুপস্থিতিতে তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক বলেন, ড. আকবর আলি খান শুধু যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তা নয়, তিনি উন্নয়ন যোদ্ধাও ছিলেন। একজন উন্নয়ন যোদ্ধা হিসেবে তিনি নীতি প্রণয়নে অবদান রেখেছেন। তিনি শিক্ষক ছিলেন, লেখক ছিলেন, সর্বোপরি একজন চিন্তক ছিলেন। 

সভায় বক্তারা বলেন, আকবর আলি খান মৃদুভাষী হয়েও শক্তিশালী কণ্ঠস্বরের একজন বিবেকবান মানুষ ছিলেন। আমলাদের জন্য তিনি একজন মডেল। অনেকেই মনে করেন, আমলাদের বেশি জ্ঞানী ও স্পষ্টভাষী হওয়ার দরকার নেই, আমলাদের শুধু আনুগত্য থাকলেই চলে। এ ক্ষেত্রে আকবর আলী খান ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী এবং জ্ঞানী মানুষ। অবসরের পরেও নীতিবোধের জায়গা থেকে তিনি যে সব কাজ করে গেছেন, দেশের মানুষ তা মনে রাখবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত