Ajker Patrika

১ গ্রামের সংঘর্ষে ৫ গ্রামের অংশগ্রহণ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১২

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন দুজন। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৭টি বসত বাড়ি। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুই জনসহ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচটি গ্রামের দেড় হাজার লোক অংশগ্রহণ করে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আটঘর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সঙ্গে গত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া বকুল মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের নেপথ্যে রয়েছে আটঘর ইউনিয়নে স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ওই ইউনিয়নের নিহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যাকাণ্ড।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক ব্যক্তি জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সমর্থক খোয়াড় গ্রামের সামাদ মাতুব্বরের সঙ্গে মো. বকুল মাতুব্বরের সমর্থিত আমিনুর মাতুব্বরের কথা-কাটাকাটি হয়। বিষয়টি উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে জড়ো হয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষে প্রতিবেশী সেনহাটি, গোবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বালিয়া গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন। এসব গ্রামের লোকজন খোয়াড় গ্রামের সঙ্গে জোট বেধে গ্রাম্য দল করেন বলে জানা যায়। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।

ওই দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুর। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে  শটগানের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতুব্বর, ফিরোজ মাতুব্বর, আহম্মদ মাতুব্বর ও জালাল শেখসহ উভয় গ্রুপের অনন্ত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ রাজিব মোল্লা (২০) ও ইস্রাফিল শেখকে (২৫) ঢাকা একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজিব সিংহপ্রতাপ গ্রামের চুন্নু মোল্লার ছেলে ও ইস্রাফিল একই গ্রামের কাসেম শেখের ছেলে।

এ বিষয়ে আমিনুল মাতুব্বর বলেন, ‘সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতুব্বর তাঁর দল নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনহাটী, গোবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাব থেকে শত শত লোক এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের তিনটি ও সত্তার মাতুব্বরের দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।’

ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সমর্থক সামাদ মাতুব্বর বলেন, ‘গ্রাম্য দল পক্ষ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতুব্বর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক লোকজন এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এর ফলে মোহাম্মাদ ফকিরের দুটি, কুদ্দুস মাতুব্বরের তিনটি, মানিক মাতুব্বরের তিনটি, জালাল শেখে দুইটি ও শুকুর মশালচীর দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে তাঁরা।’

সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, গত এক বছরের মধ্যে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা সালথায় হয়নি। সংঘর্ষে কয়েক গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে অংশ নেয়। থানা ও জেলা পুলিশ সংঘর্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে শটগানের ১৫টি গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। তবে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই রকম কথা আমি শুনেছি। ওই দুই তরুণের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত