Ajker Patrika

জমি-বাড়িপ্রীতি পুলিশ কর্মকর্তাদের স্বজনদের

  • পুলিশ কর্মকর্তাদের স্ত্রীসহ স্বজনেরা কিনেছেন জমি, করেছেন বাড়ি।
  • সাভার ও আশুলিয়ায় ওসি থাকাকালে সাভারে ফ্ল্যাট কিনেছেন এক কর্মকর্তা।
  • বাধ্যবাধকতা থাকলেও কেনার আগে নেওয়া হয়নি অনুমোদন।
অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার কাইচাবাড়িতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) পেছনের প্রাচীর ঘেঁষে বেশ কিছু বহুতল ভবন। এগুলোর মধ্যে তিনতলা একটি ভবনের মালিক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলমের স্ত্রী মাসুমা খানম। ৬ শতাংশ জমির ওপর এই বাড়ি নির্মিত হয়েছে ২০১৪ সালে। জমি কেনা হয় ২০১৩ সালে। এস এম বদরুল আলম তখন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন।

শুধু এস এম বদরুল আলম নন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় কর্মকালীন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও স্বজনদের নামে সাভার, আশুলিয়া এবং ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনা হয়। কারও কারও কেনা জমিতে বাড়িও উঠেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা জমি ও বাড়ির তথ্য নিশ্চিত হতে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের পাশাপাশি সাভার ও আশুলিয়া সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে দলিল সংগ্রহ করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য ও দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এস এম বদরুল আলমের স্ত্রী মাসুমা খানমের নামে ২০১২ সালের মার্চে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের উত্তর রামেন্দ্রপুর মৌজায় ৩৩ শতাংশ, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ধামসোনা ইউনিয়নের গণকবাড়ি মৌজায় ৬ শতাংশ এবং একই বছরের ডিসেম্বরে ধামসোনার বাইপাইল মৌজায় সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি কেনা হয়। দলিলগুলোতে ওই সাড়ে ৫৫ শতাংশ জমির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে ওই সময়ের বাজারদর অনুযায়ী দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা।

মাসুমা খানমের ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে গণকবাড়ি মৌজার ৬ শতাংশ জমিতে। স্থানীয় জানান, তখন ওই জমির বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা। বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা।

বাড়িটি দেখভাল করা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘স্যার ও স্যারের স্ত্রী অনেক দিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। আমি তাঁদের অবর্তমানে জমি ও বাড়ি দেখাশোনা করি। ভাড়া তুলে স্যারের কাছে পাঠাই।’

বিদেশে থাকায় এসব বিষয়ে মাসুমা খানম বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামালের স্ত্রী খন্দকার শামীমা হাসানের নামে ২০১৩ সালে গণকবাড়ি মৌজায় ৭ শতাংশ, একই বছর পাথালিয়া ইউনিয়নের শকরান মৌজায় ৫ শতাংশ এবং ২০১২ সালে স্কুলপড়ুয়া ছেলে মাহিম মুরসালিমের নামে সাভার পৌর এলাকার ছোট বলিমেহের মৌজায় আড়াই শতাংশ এবং ২০১১ সালে একই মৌজায় বাবা আবু জাফর মিয়া ও ভাই তানভীর আহমেদের নামে ৫ শতাংশ জমি কেনা হয়। মোস্তফা কামাল তখন সাভার ও আশুলিয়া থানার ওসি ছিলেন। দলিলে এসব জমির ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। স্থানীয়দের মতে, তখন প্রকৃত বাজারদর ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে মোস্তফা কামাল কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে তাঁর বর্তমান কর্মস্থল জানা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্টের পর মোস্তফা কামালের নামে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। এ কারণে হয়তোবা তিনি সাবধানতা অবলম্বন করছেন। তাই তাঁকে মোবাইলে বা সরাসরি না পাওয়ারই কথা।

সাভার পৌর এলাকার পার্বতীনগরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের নয়তলার ‘ডি’ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিক পুলিশ পরিদর্শক এ এফ এম সায়েদ। সাভার ও আশুলিয়া থানার ওসি থাকাকালে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। জানা গেছে, এমন ফ্ল্যাটের দাম প্রায় কোটি টাকা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনি তখন আশুলিয়া থানার ওসি ছিলেন। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

ওই ভবনের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শক এ এফ এম সায়েদ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে গেছেন।

ধামরাই পৌরসভার ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় ১৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের আটতলা বাড়ির মালিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন রায়ের স্ত্রী মনিকা সরকার। ওই জমি কিনে বাড়ি করার সময় ভজন রায় ধামরাই থানায় কর্মরত ছিলেন।

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে ২০২২ সালে ধামরাই পৌরসভায় করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর এক পত্রে মনিকা সরকারের নামে ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় আটতলা বাড়ি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০২৪ সালে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া এক পত্রে জানানো হয়, মনিকা ধামরাইয়ে জমি কেনার এবং আটতলা বাড়ি নির্মাণের আগে তাঁর স্বামী সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী কোনো অনুমতি নেননি।

স্থানীয়রা জানান, জমি কেনাসহ এমন একটি বাড়ি নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়।

জানতে চাইলে ভজন রায় বলেন, ‘কিছু টাকা ঋণ করে আর কিছু টাকা বাবার (ভজন রায়ের শ্বশুর) কাছ থেকে নিয়ে আমার স্ত্রী জমি কিনে বাড়িটি নির্মাণ করেন। মোট খরচ আমার জানা নেই। তবে বাড়ি বা জমির পেছনে আমার কোনো টাকা খরচ হয়নি।’

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাভার শাখার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিকালে কোনো সরকারি কর্মচারী বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া আড়াই লাখ টাকার ওপরে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। তাঁর ধারণা, পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে এসব স্থাবর সম্পত্তি কেনার আগে বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এখন তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

যোগাযোগ করা হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা জেলা কার্যালয়-২-এর সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদ বলেন, ‘সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়া থানায় কর্মরত অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। আমার জানামতে, কোনো অভিযোগও করেননি কেউ। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘গরু চুরি করতে এসে’ গণপিটুনিতে একজন নিহত, ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণপিটুনির শিকার চোর চক্রের সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণপিটুনির শিকার চোর চক্রের সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ‘গরু চুরি করতে এসে’ গণপিটুনির শিকার হয়েছে চোর চক্রের চার সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে উপজেলার বলভদ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে চক্রের সদস্য মো. মতিয়ার রহমান (৪৫) নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত মতিয়ার রহমান বাগেরহাটের চরগ্রাম এলাকার মৃত রশিদ শেখের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ভাগাবাজার এলাকার মো. বজলু হাওলাদারের ছেলে মো. রমন হাওলাদার (৩৮), ফকিরহাটের চাকুলি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে মো. আসাদুল শেখ (৪০) ও ফকিরহাটের আরপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদের ছেলে মো. জনি (৩৮)।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহিশপুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. তালেবুল্লাহ জানান, ভোররাতে একটি মিনি ট্রাক নিয়ে চোর চক্রের সদস্যরা বলভদ্রপুর গ্রামে গরু চুরি করতে আসে। বিষয়টি টের পেয়ে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। পরে চারজনকে আটক করে গণপিটুনি দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মতিয়ার রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুফতি কামাল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই মতিয়ার রহমানের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।’

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ থানার পরিদর্শক ভবতোশ চন্দ্র বলেন, গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন এবং তিনজন আহত রয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহত ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালিসের মধ্যে ১ জনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন

মাগুরা প্রতিনিধি 
সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় আহত ব্যক্তিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় আহত ব্যক্তিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরা সদর উপজেলায় সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় বাদশা মোল্যা (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের বলুকগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খেতের ধান কাটা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য ওই সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে বর্গাচাষি আনোয়ার হোসেন ও শিউলি খাতুনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তাঁদের সে বিরোধ মীমাংসার জন্য আজ দুপুরে সালিসের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সালিসের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবির (২২) উত্তেজিত হয়ে শিউলি খাতুনের মামা বাদশা মোল্যাকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, বাদশা মারা গেছেন।

ঘটনার পর প্রতিপক্ষের লোকজন আনোয়ারের বাড়িতে আগুন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সালিস বৈঠকে কথা-কাটাকাটির জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধভাবে সার বিক্রির দায়ে ডিলারকে জরিমানা, ৩৬০ বস্তা সার জব্দ

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
পাটগ্রামে অবৈধভাবে আনা সার ট্রাক থেকে ভ্যানে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাটগ্রামে অবৈধভাবে আনা সার ট্রাক থেকে ভ্যানে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবৈধভাবে রাসায়নিক সার বিক্রির সময় অভিযান চালিয়ে ৩৬০ বস্তা সার জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন লঙ্ঘন করে বরাদ্দের বাইরে সার কিনে খুচরা বিক্রির অপরাধে ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় উপজেলার বাইপাস মোড়ের করিম ট্রেডার্সের পাশে এই অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স অগ্রণী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফারুক আহম্মেদ লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর সরকারি গোডাউন থেকে একটি ট্রাকে ইউরিয়া, ডিএপি, পটাশসহ মোট ৭০০ বস্তা সার কিনে আনেন। তিনি সেই সার বাইপাস মোড়ে আনলোড করে বিভিন্ন ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতা বা ভ্যান গাড়ি দিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন।

খবর পেয়ে পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। এরপর স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ট্রাকটি জব্দ করে। ঘটনাস্থলেই পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

আইন লঙ্ঘন করে বরাদ্দের বাইরে লালমনিরহাট থেকে সার কিনে এনে খুচরা বিক্রির অপরাধে ডিলার ফারুক আহম্মেদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ৩৬০ বস্তা সার জব্দ করেন।

পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদ পেয়েছিলাম যে, করিম ট্রেডার্সের সামনে সারের একটি ট্রাক খালাস করা হচ্ছে এবং ভ্যানে বিভিন্ন ইউনিয়নের খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ইউএনওকে জানাই। কর্তৃপক্ষ এসে কোনো বৈধতা না পাওয়ায় ডিলারকে জরিমানা ও সার জব্দ করে। কৃষকেরা যেন ন্যায্য মূল্যে সার পান, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উত্তম কুমার দাশ বলেন, অবৈধভাবে সার এনে মজুত ও খুচরা বিক্রির অপরাধে সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬ অনুযায়ী ডিলার ফারুক আহম্মেদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা সারগুলো পরে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হবে। সারের কৃত্রিম সংকট নিরসনে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২

পাবনা প্রতিনিধি
নিহত গাজ্জালী মুন্সীর বাড়িতে প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত গাজ্জালী মুন্সীর বাড়িতে প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঈদগাহ মাঠের দ্বন্দ্ব নিয়ে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মধ্য পুংগলী গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত একজন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টেবর) ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আহত গাজ্জালী মুন্সীকে (৫০) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত গাজ্জালী মুন্সী মধ্য পুংগলী গ্রামের মৃত রমজান মুন্সীর ছেলে। তিনি হাজী গোষ্ঠীর লোক।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে মধ্য পুংগলী গ্রামের হাজী গোষ্ঠী ও বাদশাহ গোষ্ঠীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, গত বছর ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। সেই পুরোনো বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার সকালে হাজী গোষ্ঠী ও বাদশাহ গোষ্ঠীর মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষে আহত ২০ জনকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গাজ্জালী মুন্সী নামের একজনকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

পাবনা-২
পাবনা-২

খবর পেয়ে ফরিদপুর থানা-পুলিশ শুক্রবার সকালে নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।

ফরিদপুর থানার ওসি শাকিউল আজম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার রাতে উভয় পক্ষ দুটি মামলা করেছে। পরে কুদরত এ খুদা (৪৫) ও ধলা (২৫) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত