Ajker Patrika

কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল: সাড়ে ৩ কিলোমিটারজুড়ে সংঘাতের চিহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ২৩
Thumbnail image

একই সময় কাছাকাছি স্থানে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ডাকা নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা ছিলই। যদিও উভয় দলের পক্ষ থেকেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলা হচ্ছিল। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরব হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো তাদের নজরে রয়েছে ধরে নিয়ে সংঘাত না হওয়ার বিষয়ে আশাবাদীও ছিলেন সাধারণ মানুষ।

অবশ্য সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জল ও স্থলপথে গণপরিবহনে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। ঢাকার প্রবেশমুখে মোড়ে মোড়ে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষও। 

কমলাপুর রেলস্টেশনের বাহিরের অংশে রাখা একটি জিপে আগুন দেওয়া হয় সংঘর্ষের সময়। ছবি: প্রতিবেদকশেষ পর্যন্ত সমাবেশ শান্তিপূর্ণ থাকল না। আজ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটা শান্তই ছিল। তবে বেলা ২টা থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে কাকরাইলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর সেখানে হাজির হয় পুলিশ। পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। প্রথমে বিএনপি কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ পিছু হটলেও পরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। দ্রুতই সমাবেশস্থল থেকে নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। 

এরপর কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তায় থেমে থেমে চলতে থাকে সংঘর্ষ। বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। 

আগুনে পোড়ানো কমলাপুর  পুলিশ বক্স। ছবি: প্রতিবেদকএই প্রতিবেদনে লেখা পর্যন্ত (৬টা ৩৪ মিনিট) রাজধানীর বিভিন্ন অংশে গাড়ি পোড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছিল। বিএনপির সমাবেশস্থল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে শুরু করে ফকিরাপুল পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। 

চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মারধরের শিকার পুলিশের একজন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নয়াপল্টনে পুলিশ গুলি করেছে। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা যুবদলের এক নেতা হাসপাতালে মারা গেছেন। 

স্টেশনের সামনের মালটানা গাড়িতেও  আগুন দেওয়া হয়। ছবি: প্রতিবেদকআজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা এসব অঞ্চল থেকে জানিয়েছেন, রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। কাকরাইল থেকে কমলাপুর ও পল্টন ফকিরাপুল এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বেলা ১টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে টানা ছয় ঘণ্টা। এই এলাকার রাস্তায় এখন শুধু গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইটপাটকেল, ব্যানার ও লাঠিসোঁটা পড়ে আছে। 

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষএর আগে দুপুর ১২টায় রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় এলাকায় প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা একটি গাড়িতে করে বায়তুল মোকাররমের দিকে যাচ্ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির এক দেড় শ নেতা-কর্মীর একটি মিছিলকে লক্ষ্য করে গাড়ি থেকে টিজ করতে থাকেন গাজীপুর থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।  বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মিছিল থেকেই আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। 

রয়েল কোচ কাউন্টারের সামনে রাখা এই পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: প্রতিবেদক

তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। রমনা থানার ওসি আবুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁদের প্রতিহতের চেষ্টা করে। পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। 

সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পাশেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও পড়ে ইটপাটকেল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে আসে নয়াপল্টনে সমাবেশস্থলে। সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। 

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের আন্তর্জাতিক বাস ডিপো অফিস, কমলাপুর মোড়ের পুলিশ বক্স, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আবর্জনা ব্যবস্থাপনা অফিসসহ একাধিক স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

আরামবাগ এলাকায় মতিঝিল পোস্ট অফিস হাই স্কুল সংলগ্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের অন্তত সাতটি  ময়লা টানা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: প্রতিবেদক

বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এরপরই আশপাশে অফিস, যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তত সাতটি ময়লার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

আরামবাগ ও ফকিরাপুল এলাকায় দেখা যায়, পল্টন থেকে আরামবাগের দিকে চলে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুড়ছে। পুলিশও তাঁদের প্রতিহত করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে রয়েল কোচ পরিবহনের একটি বাস ও কমলাপুর রেলস্টেশনের ভেতরে থাকা একটি জিপে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার পাঁচটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেলের তোপে মুখে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে পিছু হটে পুলিশ। রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় এলাকায় প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনে বেলা সোয়া ১টা নাগাদ এ ঘটনা ঘটে ৷ 

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কাকরাইলে বিকেল সাড়ে ৫টায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটি কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তীকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কারা আগুন দিয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ দুজন যুবক এসে বাসে পেট্রল ছিটিয়ে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো বাস জ্বলতে থাকে। আগুন দেওয়ার পর ওই দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে কাকরাইল মোড় দিয়ে চলে যায়।

রাস্তায় পড়ে আছে পুলিশের ছোড়া টিয়ার সেল। আরামবাগ এলাকায়। ছবি: প্রতিবেদকবিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে আরামবাগ, কমলাপুর এলাকার শান্ত হতে শুরু করে। পুরো এলাকা পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারদের নিয়ন্ত্রণে। সড়কে যাত্রীবাহী যানচলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে অল্প পরিমাণে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছিল। সাধারণ মানুষ পথে নেমেছে। তাঁরা এসব যানবাহনে চলাচল করছেন। তবে কমলাপুর এলাকায় আগুন দেওয়া ভাঙচুর করা দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়নি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত