Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ছাত্রদলের সাবেক নেতা নিহত

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ৫৫
Thumbnail image
নিহত লাভলু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ছয়জন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুরে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। লাভলু আহমেদের ওপর তিন দফায় হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

নিহত লাভলু আহমেদ কুস্তা গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে। তিনি ২০০৩ সালে ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। চার মাস আগে কুয়েত থেকে দেশে ফিরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন কুস্তা গ্রামের মৃত দীন ইসলামের ছেলে, ঘিওর সদর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান খান আলতাফ (৪২), একই গ্রামের শওকত দরজির ছেলে সদর ইউনিয়ন যুবদলের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হিমেল দরজি (২৫), উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আফিকুল ইসলাম, ঘিওর উপজেলা মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. রফিকের ছেলে সোহাগ (২৫), আজাদ খানের ছেলে তামিম (২৫) ও শাহ আলমের ছেলে মো. সেলিম (২৮)।

আহত ব্যক্তিদের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা জানান, এলাকার ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের জেরে ঘিওর সদর (উপজেলা মোড়) ও কুস্তা গ্রামের বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ দ্বন্দ্ব চলছে। এ বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও কয়েক দফায় আলোচনা করে মীমাংসা করে দিয়েছেন। নেতাদের সামনে সমঝোতা হলেও আড়ালে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েই যায়। এরই ফলে গতকালের সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হতাহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যুবদলের নেতা হিমেলকে উপজেলা মোড় এলাকার সোহাগ, তানভীর, বাবু, শীতল, তামিম, সেলিমসহ অন্তত ১৫-২০ জন বেধড়ক পেটান। দুই পক্ষের মারামারিতে আহত হিমেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে দ্বিতীয় দফায় হিমেলসহ তাঁর পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা হয়। আহত ব্যক্তিদের দেখার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা লাভলু মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান আলতাফ হাসপাতালের গেটে যাওয়ার পরপরই তৃতীয় দফায় তাঁদের ওপরও হামলা চালায় প্রতিপক্ষ।

আহত ওয়ার্ড যুবদল নেতা হিমেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ওয়ার্ড যুবদল নেতা হিমেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ সময় চাপাতি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় লাভলু, আলতাফ ও হিমেলকে। খবর পেয়ে ঘিওর থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গুরুতর আহত লাভলুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখান থেকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আহত আলতাফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু জানিও না।’

আহত ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান আলতাফ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান আলতাফ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, দলীয়ভাবে এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘিওর থানা-পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতা মারা গেছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন। তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত