Ajker Patrika

‘ক্যাশে লাখ টাকা রাইখা পঞ্চাশ টাকা নিয়া বাইর হইছিলাম, এহন কিছুই নাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ০৩
Thumbnail image

ছোট বেলায় বাবা মারা গেছেন। জীবন ও জীবিকার লড়াইটা শুরু হয়েছিল সেই অল্প বয়স থেকেই। সংসারের হাল ধরতে বড় ভাই কাজের খোঁজে গেছেন সৌদিতে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে, প্রবাসী ভাইয়ের থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিউ সুপার মার্কেটের ভাড়া দোকানে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন আল আমিন। 

ছোট আরও দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে দশ বছরের প্রচেষ্টায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন। এই ব্যবসা ও দোকানটাই তাঁর ও পুরো পরিবারের জীবন-জীবিকার বড় অবলম্বন। সেটা যখন চোখের সামনে পুরে ছাই হয় তখন নিজেকে সামলে রাখা খুব কঠিন। এই কঠিন সময়ে মাথায় পানি ঢেলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আল আমিন। তিন তলায় লেবাস পয়েন্ট নামে তাঁর কাপড়ের দোকান ছিল। 

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গত রাইতে (বৃহস্পতিবার) ভালো বিক্রি হইছিল। ক্যাশে লাখ টাকা রাইখা, পঞ্চাশ টাকা রিকশা ভাড়া নিয়া ৩টার দিকে বাড়ি গেছিলাম। ক্যাশ টাকা, লগে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল পুইরা ছাই হইয়া গেছে। কিছুই বাইর করতে পারি নাই ভাই।’ আগুন লাগা ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের পাস দিয়ে বিশ্বাস বিল্ডার্সে যাওয়ার রাস্তার ফুটপাতে বসে এসব কথা বলছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ী। 

তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা ব্যাবসাডা এই পর্যায়ে আনছিলাম। দশটা বছর দিন রাইত এক কইরা আমরা তিন ভাই এই দোকানে কাম করছি। মাঝের করোনায় বড় লোকসান খাইছি। ভাবছিলাম এইবার ঈদে ব্যবসা কইরা সেইডা পোষাইয়া নিমু। কিন্তু এইবারতো আর কিছুই থাকল না। করোনার সময় মাল আছিলো বেচতে পারি নাই। এহনতো কিছুই থাকল না। এত ধোঁয়া আর আগুনের তাপ, দোকানের ধারে কাছে যাইতে পারি নাই। একটা মাল বাইর করতে পারি নাই।’ 

আল আমিনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন দুপুর দুইটা। কেউ একজন এসে তাঁকে খবর দিলো তিন তলায় তাঁর দোকানের কাছে আবার আগুন দেখা যাচ্ছে। এই খবর তাঁকে খুব বেশি নাড়া দিল না। সেটা বোঝা গেলো প্রতি উত্তরে। তিনি আবার বলেন, ‘আগুন আবার দেহা গেলেই কী? আমরাতো আর ঢুকতে পারমু না। কিছু বাইরও করতে পারমু না।’ 

আল আমিনের ভাষ্য মতে, ঈদ উপলক্ষে মূল বিক্রি শুরু হয়েছিল গতকাল রাত থেকেই। কালই এই রমজানে সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে তাঁর দোকানে। কিন্তু ঈদ বাজারের চাপে তাঁর চোখে ঘুম নাই গত কয়েক সপ্তাহ। 

নির্ঘুম রাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালামাল দোকানে তোলার কাজ, ডিসপ্লে করার কাজ সব মিলায়া গত কয়েক সপ্তাহ প্রতি রাতে বড় জোড় দুই-তিন ঘণ্টা ঘুমাইতে পেরেছি। 

অন্তত ৩০ লাখ টাকার মালামাল আর ক্যাশে রেখা যাওয়া এক লাখ ২০ হাজার টাকা সব হারিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। ঈদকে কেন্দ্র করে যে নির্ঘুম রাত পার করছিলেন তিনি সেই ঘুম আবার ফিরবে কিনা, সেটার জানা নেই তাঁর।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত