Ajker Patrika

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মানব পাচার প্রতিরোধকে ঝুঁকিতে ফেলেছে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৬: ০৩
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মানব পাচার প্রতিরোধকে ঝুঁকিতে ফেলেছে

বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মানব পাচার প্রতিরোধকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনের কারণ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি। আর বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মানব পাচার নিয়ে এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা। 

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে ‘প্রোমটিং মাল্টিলেটারাল কো-অপারেশন টু প্রিভেন্ট হিউম্যান ট্রাফিকিং অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট স্মাগ্লিং’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মানব পাচার বা অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধ কোনো একক দেশের বিষয় নয়। প্রতিরোধ করতে দেশগুলোকে একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। তবে যেভাবে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে, তা মানব পাচার প্রতিরোধকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ, আফগানিস্তানের পরিবর্তন, শ্রীলঙ্কার পরিবর্তিত পরিস্থিতির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা মানব পাচার প্রতিরোধে দেশগুলোর সহযোগিতার পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। 

সেমিনারের প্রথম অংশে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান কাজী ইমতিয়াজ হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মুকসুদুর রহমান। সেমিনারের দ্বিতীয় ভাগে মানব পাচার প্রতিরোধ, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধগুলো উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএসের গবেষক বেনুকা ফেরদৌসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মো. ওবায়দুল হক, জাতিসংঘ অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) অভিবাসন ও সুরক্ষা ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইউজিন পার্ক এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর। সেমিনারের দ্বিতীয় অংশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী। 

মুক্ত আলোচনায় ঢাকার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয় সংস্থা ইউএনওডিসির মানবপাচার ও অভিবাসন ইউনিটের প্রধান মেদেহি হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবপাচার নিয়ে আইন থাকলেও শ্রমিক পাচার নিয়ে কোন আইন নেই। বহুপক্ষীয় সহযোগিতার কথা বলা হলেও সেই ব্যবস্থা আমাদের আইনে নেই। মানবপাচার ও শ্রমিক পাচার দুটিই অপরাধ হলেও, শ্রমিক পাচার নিয়ে বাংলাদেশে কোন আইন নেই। যার ফলে অন্য দেশের সঙ্গে শ্রমিক পাচার নিয়ে আমরা সহযোগিতা করতে পারি না।’ এ বিষয়ে আইন করার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা। 

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘ভূমধ্যসাগরে অবৈধভাবে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এ কাতারে আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মত দেশগুলো রয়েছে। সেই দেশগুলোতে যুদ্ধ হয়েছে।’ বাংলাদেশে কী হয়েছে সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। আর বাংলাদেশ এ অবস্থানে এসেছে যখন লিবিয়ার বাজার বন্ধ ছিল। আর এখনতো বাংলাদেশ লিবিয়ার বাজার খুলে দিয়েছে। এখন ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় যায় সেটি দেখার বিষয়।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় পাচারকারীরা যে সুযোগগুলো নেয়, তার ব্যাখ্যায় বেনুকা ফেরদৌসি বলেন, বাংলাদেশের পাচার হওয়ার ৫১ শতাংশ অর্থনৈতিক চাহিদার কারণে, ২৯ শতাংশ শিশু অকার্যকর পারিবারিক ব্যবস্থার কারণে, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৩ শতাংশ এবং অনিয়মিত অভিবাসী হচ্ছেন ১০ শতাংশ। বিশ্বে বাড়তে থাকা যৌনপল্লি, আকর্ষণীয় শ্রম বাজার এবং গন্তব্য দেশগুলোতে কঠিন অভিবাসন আইনের কারণে মানবপাচার হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত