Ajker Patrika

ইউপি সদস্য এসএসসি পাস করলেন ৪৩ বছর বয়সে

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১৫
ইয়ার মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
ইয়ার মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৪৩ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবারের এসএসসি সমমানের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন মো. ইয়ার মাহমুদ নামের ওই ইউপি সদস্য। গতকাল সোমবার এ ফলাফল প্রকাশিত হয়।

জানা গেছে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর্থিক সংকটে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তবুও হাল ছাড়েনি।

ইয়ার মাহমুদ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

ইয়ার মাহমুদের মেয়ে স্কুলশিক্ষক আরিফা খাতুন বলেন, ‘দরিদ্র কৃষক বাবার ঘরে আমার বাবার জন্ম। বাবা স্কুল জীবনে খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে অষ্টম শ্রেণিতেই বাবার পড়াশোনা বন্ধ হয়। তখন থেকেই অসুস্থ বাবার সংসারের হাল ধরতে হয়েছে বাবাকে। যার কারণে আর্থিক সংকটে পড়াশোনা বন্ধ হয়। কিন্তু বাবা হাল ছাড়েননি। ২০২৩ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০২৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যেখানে ফলাফল এসেছে এ গ্রেড। বাবার এই বয়সে এসএসসি পরিক্ষায় পাশ করায় আমরা খুবই আনন্দিত। অনেক খুশি পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা।’ তিনি বলেন, ‘বাবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পরিবারের সবাই সহযোগিতা ও ভরসা দিয়েছে। যার কারণে বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

ইয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আজ পূরণ হলো। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবো। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। কৃষক বাবা অসুস্থ হলে বাবার সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তখন থেকেই সংসারের খাটুনি অসুস্থ বাবা মায়ের চিকিৎসা এ নিয়ে বহুবছর কেটেছে। তবুও পড়াশোনা করার আগ্রহ থেকে যায়। নিজের একমাত্র মেয়েকে মাস্টার্স ডিগ্রী পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছি। বর্তমানে সে একটি স্কলের সহকারী শিক্ষক। মেয়ের কথা ভেবে আমিও মনস্থির করি স্কুলে ভর্তি হব। ২০২৩ সালে ভর্তি হই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। ক্লাসে গেলে অনেকেই হাসাহাসি করত। তবুও পিছু হাঁটিনি। পরিক্ষার রেজাল্ট শুনে মনটা ভরে গেল। এই ফলাফলের জন্য আমার স্ত্রী সন্তান ও প্রতিবেশী এবং শিক্ষকদের অবদান আছে। তাদের জন্যই আমার স্বপ্ন পূরণ হলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘পড়াশোনা ছাড়া বর্তমান সমাজে কোন কাজ করা যায় না। এটা হোক ব্যবসা চাকুরি অথবা আমি যে মেম্বার এখানে আরও বেশি পড়াশোনা দরকার। এমনকি কৃষি কাজ করতেও পড়াশোনা দরকার।’

শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এই বার্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সকল বয়সীদের পড়াশোনা দরকার। ইয়ার মাহমুদ সমাজের জন্য একটি বার্তা। শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। তার জীবনের মঙ্গল কামনা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত