Ajker Patrika

শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা

মাদকসেবীদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুন, ক্যাম্পাস উত্তাল

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের।
  • সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাইকের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে খুন।
  • গ্রেপ্তার ৩ জন কারাগারে। একজনের বাড়িতে আগুন।
  • আজ অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ২৩: ২৩
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য।	ছবি: আজকের পত্রিকা
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) খুনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল। নিহত সাম্য ছাত্রদল নেতা ছিলেন।

সাম্য খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ বলছে, তিনজনই মাদকসেবী। মঙ্গলবার রাতে তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন মাদক সেবন করতে। এ সময় মোটরসাইকেল ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁরা সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে। তিনি এই হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।

গ্রেপ্তারের পর তিনজন কারাগারে

সাম্য হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজধানীর রাজাবাজার ও গ্রিন রোড এলাকা থেকে। তাঁরা হলেন মো. তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও মো. পলাশ সরদার (৩০)।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই ‘বহিরাগত’। তাঁরা ১৫-২০ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেন। থাকেন রাজধানীর রাজাবাজার এলাকায়। ঘটনার দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক সেবনের জন্য গিয়েছিলেন।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, সাম্যর ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার দুজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাঁদের শনাক্ত করেছেন।

গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার তিনজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক হাসান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদ আলম তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রায় ২০ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। রাজাবাজার এলাকায় থাকেন। ঘটনার দিন তাঁরা মাদক সেবনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।

ঘটনার বর্ণনা

সাম্যর বন্ধুরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চ ও রমনা কালীমন্দিরের মাঝখানের খোলা জায়গায় ক্রাইম সিন চিহ্নিত করে রেখেছে সিআইডি। সেখানে কয়েকটি ইট ও ঘাসের মধ্যে রক্ত লেগে রয়েছে।

কালীমন্দিরের ফটকের পাশে থাকা একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় কয়েকজন মারামারি করে। কিন্তু কী নিয়ে, কেন মারামারি করেছে, তা তাঁরা জানেন না। পরে শোনেন, একজন মারা গেছেন।

এক দোকানি বলেন, মাঝেমধ্যে মাদক সেবন নিয়ে এমন মারামারি লাগে। গতকাল কী জন্য মারামারি লেগেছে, তা জানেন না।

উপাচার্য, প্রক্টর ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের

সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে জড়ো হন তাঁর বন্ধু, সহপাঠী ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান তাঁরা। রাত ২টার দিকে মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। তখন অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং উপাচার্যের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য ও প্রক্টর মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তাঁরা।

সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘আমরা দেখছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে; অথচ সরকার তা নিয়ে নিশ্চুপ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘অতিদ্রুত আমরা এই ভিসি ও প্রক্টরকে সরানোর অনুরোধ করছি সরকারের কাছে। না হলে আমরা এই সরকারকে সরাতে বাধ্য হব।’

আজ অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গতকাল মানববন্ধন করেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান তাঁরা। সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল।

গতকাল বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বৈঠক করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক শেষে বিকেলে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সাম্যকে হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার শোক পালন ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেন।

উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে রমনা পার্কের মতো একটি স্মার্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ এ ছাড়া নিয়মিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযানের জন্য একটা টিমও গঠন করা হবে বলে জানান উপাচার্য।

সাম্যর মৃত্যু নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সাম্যর মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে কী ধরনের অপরাধ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার গুরুত্বসহকারে দেখছে।’ বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা

গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে সাম্যর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে তাঁর বিভাগে। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাম্যর দ্বিতীয় জানাজা হয়। এতে অংশ নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা শেষে বেলা আড়াইটার দিকে পরিবারের লোকজন, তাঁর বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা মরদেহ নিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন।

গ্রামের বাড়িতে মাতম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সাম্যর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে চলছে মাতম। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী তাঁর বাড়িতে জড়ো হন। স্যাম্যর লাশ গতকাল রাত ৭টার দিকে বাড়িতে পৌঁছায়। রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে লাশ দাফনের কথা ছিল।

সাম্য বেলকুচির সরাতৈল গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। তাঁর মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

সাম্যর বড় চাচা কাউসার আলম বলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার ভাতিজার যে তাকে হত্যা করা হলো। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত, তাদের দ্রুত ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’

সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভাসানী মিলনায়তন চত্বরে এসে শেষ হয়।

তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

সাম্য হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে গতকাল সাত সদস্যের কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির। পাশাপাশি ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্বে থাকবেন।

মাদারীপুরে আসামির বাড়িতে আগুন

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী এলাকার তামিম হাওলাদারের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে এ ঘটনা ঘটে। কে বা কারা দিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আটক তামিম হাওলাদার ওই এলাকার এরশাদ হাওলাদারের ছেলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার তিনজনই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। সরকারের পতনের আগপর্যন্ত তামিম ও পলাশ গ্রামে অবস্থান করতেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। সম্রাট মল্লিক মাদকাসক্ত বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ছয় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া মৎস্যজীবীরা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), ইসহাক আলীর ছেলে মীর জাফর আলী (৪৫), ইছাক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), ফকির আলীর ছেলে আমের আলী (৩৫), সলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁরা সেখানে প্রায় ১৩ মাস সাজা ভোগ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শেরপুর ৩৯ বিজিবির দায়িত্বে থাকা এলাকার হাতিপাগার বিজিবি কোয়ার্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত