Ajker Patrika

নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি খালপাড় দখল, দোকান বসিয়ে ভাড়া

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) 
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ০৪
সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি খালের একাংশ দখল করে বসানো দোকান। সম্প্রতি হীরাঝিল আবাসিক এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি খালের একাংশ দখল করে বসানো দোকান। সম্প্রতি হীরাঝিল আবাসিক এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় উদ্ধার করা ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের একাংশ দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। পাশের কয়েকটি ভবনের মালিক এসব দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে খালটি আবার সংকুচিত হতে শুরু করেছে। এতে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বালু দিয়ে খালপাড় ভরাট করে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। খালের পাশের হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে বিএম ভবন, মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার ও নুরুল হুদার বাড়ির সামনে এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর কারণে পাড়ের ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিলের বাসিন্দাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএনডি খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নয়নে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ডিএনডি প্রকল্প নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনী। শুরুতে বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে মোট ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়। ২০২৫ সালের জুনে কাজ শেষ করে সেনাবাহিনী। কাজ শেষ হওয়ার পরপরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এখানে সব সময় যানজট লেগে থাকে। চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় ব্যবহার করে। এখন দোকানের কারণে হাজারো মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এগুলোর কারণে উদ্ধার করা খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আবার বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান এলাকাবাসী।

মমতাজ ভিলার সামনে দোকান বসানো নিয়ে কথা হলে তা স্বীকার করে ভবনটির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘অন্য সবাই দোকান বসিয়েছে, আমি তাই দেখাদেখি দুটি দোকান বসিয়েছি। এটা অপরাধ হয়েছে, তা নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান দিয়েছি।’

নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘আমি দোকান বসিয়েছি; কিন্তু সেখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা যেতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।’

এ নিয়ে কথা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর আলম বলেন, দোকান থেকে টাকা তোলার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, ‘অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাঁদের নোটিশ পাঠাব। যদি তাঁরা কথা না শোনেন, তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগির এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত