Ajker Patrika

সুতার সংকটে পোশাকশিল্প

আফজাল হোসেন পন্টি, নারায়ণগঞ্জ
Thumbnail image

দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে সুতার দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন তৈরি পোশাক (নিটওয়্যার) কারখানার মালিকেরা। সুতার সংকটে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা ও ক্রয়াদেশ বাতিলেরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তাঁদের।

আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ তিন দেশের একটি বাংলাদেশ। চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম উঠে এলেও বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত এখনো তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাকের ভেতর নিট পণ্যের অংশ প্রায় ৫০ শতাংশ। আর নারায়ণগঞ্জে দেশের অধিকাংশ নিট কারখানা অবস্থিত। জেলায় পাঁচ শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, যার বেশির ভাগই নিটওয়্যার প্রস্তুত করে থাকে। সুতার দাম বৃদ্ধির ফলে এরা সবাই কম–বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। 

করোনার কারণে চীনের অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে সেগুলো বাংলাদেশে আসতে থাকায় আশার আলো দেখেছিল দেশের পোশাক কারখানা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত অর্ডার থাকলেও সুতার মূল্যবৃদ্ধি এবং সংকটের কারণে চাহিদামাফিক পোশাক তৈরি করতে পারছেন না মালিকেরা। এতে সামনে অনেক ক্রয়াদেশ বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করছে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মূলত পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা চীন ও বাংলাদেশের স্পিনিং মিলের মালিকদের জন্যই এই কৃত্রিম সুতার সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। পোশাক কারখানা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পোশাক কারখানাগুলোতে যখন প্রচুর অর্ডার আসল, ঠিক তখনই স্পিনিং মিলের মালিকেরা কৃত্রিমভাবে সুতার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি চীনা ব্যবসায়ীরাও ভারত থেকে সব (শতভাগ কটন) সুতা কিনে নিয়ে স্টক করে ফেলেছেন। তাই প্রচুর ক্রয়াদেশ আসার পর আমরা যে সুযোগটা দেখেছিলাম, সেটি এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা সুতার অভাবে ঠিকমতো কাপড় তৈরি করতে পারছি না। আর এ জন্য আমি সবচেয়ে বেশি স্থানীয় স্পিনিং মিলের মালিকদেরই দায়ী করব।’

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় (বিসিক) অবস্থিত এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আমার তিনটি অর্ডার শিপমেন্ট করার কথা। কিন্তু আমাদের এখানে সুতার সংকটের কারণে এই তিনটি শিপমেন্টের সব কয়টি এখন অনিশ্চয়তায় আছে। আমার ক্রেতারা ইতিমধ্যে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি সময়মতো পোশাক পাঠাতে পারব কি না, নইলে সে অর্ডার বাদ দিয়ে দেবে। আর এই অর্ডার যদি বাদ দিয়ে দেয়, তাহলে আমার প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে; যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।’

এদিকে পোশাক কারখানার মালিক দেওয়ান জাহিদুল বলেন, ‘একটা অর্ডার শুরু থেকে দাম নির্ধারণ করে উৎপাদনে যাওয়া পর্যন্ত বেশকিছু সময় লাগে। দেখা গেল সুতার যে দামটা ধরে আমরা মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম, ক্রয়াদেশ পেতে পেতেই সুতার দাম বেড়ে যাচ্ছে; ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমনকি চাহিদামতো সুতাও পাচ্ছি না বাজারে। এতে শিপমেন্টে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি অনেক ক্রেতার ক্রয়াদেশও গ্রহণ করতে পারছি না। তবে সুতার সরবরাহ স্বাভাবিক হলে ও দাম কমে গেলে আশা করি এই সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে। আর আমরা বিকেএমইএকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা স্পিনিং মিলের মালিকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করবে আশা করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তুলা আমদানিকারক জানান, করোনা মহামারির জন্য উৎপাদন কমার বিষয়টি তো আছেই। এ ছাড়াও জাহাজসংকট একটি বড় কারণ। যে তুলা আগে এক মাসেই পেয়ে যেতাম, সেটা এখন তিন মাস লাগছে। তা ছাড়া ভারত তাদের দেশে আমদানি করা তুলার ওপর শুল্ক আরোপ করায় তাদের নিজেদের উৎপাদিত তুলার চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্য সময় আফ্রিকান দেশের তুলার দাম একটু বেশি থাকে, কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় আর অন্যান্য দেশের তুলার দাম সমান হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও হাজি হাশেম স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘সুতার সংকট স্পিনিং মিলের মালিকেরা তৈরি করেননি। এটা তুলার দাম ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়েছে ও সরবরাহ খুব কম। আমরা কীভাবে সুতা তৈরি করব। আগামী তিন মাস পর্যন্ত তুলার কোনো এলসি নেবে না। তিন মাস পর এলসি খুললেও সেই সুতা হাতে পাব সামনের বছর। আমরা কীভাবে তাহলে সুতার সরবরাহ বাড়াব।’

তুলার এই সংকটের কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। শিপমেন্টের জন্য ভেসেলের সংকটও রয়েছে। ফলে সময়মতো তুলা আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত