Ajker Patrika

জ্যোৎস্না রাতে মায়াবী মুগ্ধতা ছড়ায় ‘মধুমঞ্জরি’

আব্দুর রাজ্জাক
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১৯: ১২
জ্যোৎস্না রাতে মায়াবী মুগ্ধতা ছড়ায় ‘মধুমঞ্জরি’

ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-গোলাপি-লাল ফুল সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ডালের আগায় সন্ধ্যায় ঝুলন্ত থোকায় থোকায় ফুল ফুটতে শুরু করে আর সুবাস ছড়ায়। রাতে অনেক ফুলই ফোটে; কিন্তু এত যে অসাধারণ সুন্দর, স্নিগ্ধ ও সুগন্ধে পরিপূর্ণ হতে পারে ‍‍মধুমঞ্জরী লতা ফুল, তা রাতে না দেখলে অগোচরেই থেকে যেত। 

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকটা অযত্ন অবহেলায় জন্মে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে মধুমঞ্জরি। এ ছাড়াও শৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা বাড়ির ছাদে, বেলকনিতে বা ছোট বাগানে যত্ন করে লাগিয়ে থাকেন এই ফুল। রঙের বৈচিত্র্য, স্নিগ্ধময় সুবাস আর প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের জন্য অনেক পুষ্পপ্রেমীরা তাদের প্রিয় ফুলের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন মধুমঞ্জরিকে। এই গাছের চারা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন নার্সারিতেও বিক্রি হয়।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, এই ফুলের নাম নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। একেক জনের কাছে একেক নামে পরিচিত। এর কোনো বাংলা নাম ছিল না। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নামকরণ
করেন মধুমঞ্জরী লতা। তাঁর নিজের কথায়—
‘প্রত্যাশী হয়ে ছিনু এতকাল ধরি, 
ফুলমাধুরীর অঞ্জলি দিল ভরি
মধুমঞ্জরিলতা। 

সরেজমিন বুধবার রাত নয়টায় ঘিওরের কাউটিয়ায গ্রামে প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্র ও প্রাণ বৈচিত্র্য খামার। জ্যোৎস্না রাতের মায়াবী আলো; প্রবেশমুখের তোরণজুড়ে ফুটে থাকা মধুমঞ্জরিলতা দেখে মনে হয়, আকাশের মিটি মিটি তারারা যেন নেমে এসেছে। এক অদ্ভুত মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়।

পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ক রিসোর্স সেন্টার বারসিকের মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‘তাজা ও বাসি ফুলে রঙের ভিন্নতা রয়েছে। তাজা ফুলের রঙ সাদা। ক্রমশ তা গোলাপি থেকে লাল হয়ে শেষ পর্যন্ত মেরুন রঙে পরিণত হয়। বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রচুর ফুল ফোটে। যদিও সারা বছর কিছুদিন পরপর ফুল ফোটে। এ জন্য একে বারমাসী ফুলও বলা হয়।’

এ সময় সঙ্গে থাকা প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক দেলোয়ার জাহান বলেন, ‘দিনের বেলায় এই ফুলের এক রূপ, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে অন্য রূপ। সন্ধ্যার বাতাসে অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। মৌমাছি, প্রজাপতি এবং ছোট ছোট পাখিরা দিনের বেলায় এই ফুলের ওপরে ঘুরে বেড়ায়। এই ফুল সহজেই জন্মানো যায়। বাড়ি বা বাগানের সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দেয়।’ 

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘এই ফুলের রয়েছে নামের ভিন্নতা। যেমন, মধুমঞ্জরী লতা, মধুমালতী, মাধুরীলতা, হরগৌরী ও লাল চামেলি। ইংরেজি নাম: Chinese honeysuckle, Rangoon creeper। বৈজ্ঞানিক নাম: Quisqualis indica। মধুমঞ্জরীর আদি নিবাস মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া। প্রায় ৭০ ফুট পর্যন্ত বেয়ে উঠতে পারে এই ফুল।

ঘিওর সদরের কলেজশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘প্রায় এক দশক যাবৎ আমার বাড়ির সামনে সৌন্দর্যবর্ধন করছে মধুমঞ্জরী লতা। খুব কম পরিমাণে ফল হয়। ফল দেখতে অনেকটা কামরাঙার মতো। সাধারণত কাটিং করে বা গোড়া এবং শেকড় থেকে যে লতা গজায় তা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয়।’

আজকের পত্রিকা’র সবশেষ সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন

সাধনা ঔষধালয়ের হেকিম (চিকিৎসক) উত্তম পালিত বলেন, ‘মধুমঞ্জরী শুধু আমাদের সৌন্দর্যই দেয় না, অনেক রোগ থেকে মুক্তিও দেয়। এর রয়েছে বহুবিধ ভেষজ গুণ। এর পাতা চর্মরোগে ও মাথার যন্ত্রণার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পুরোনো বাত ও হাঁপানীর উপশমে লাগে। এই ফুলের বীজ কৃমি, ডায়ারিয়া ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর কাণ্ড সর্দি, কাশি এবং ঠান্ডাজনিত রোগে ব্যবহার করা হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত