Ajker Patrika

সেদিন মৃত ভেবে লাশের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয় নাজিমকে 

মো. আল আমিন টিটু, ভৈরব
সেদিন মৃত ভেবে লাশের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয় নাজিমকে 

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নাজিম উদ্দিন সারা শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টারের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন নাজিম উদ্দিন। কিন্তু, সেই দিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়।  

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট নারীনেত্রী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শহীদ বেগম আইভি রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছিলেন ভৈরবের আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন। সেদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় যোগ দিয়ে ছিলেন। 

এ প্রসঙ্গে নাজিম বলেন, আইভি আপা পানি খাবেন। তাই, পানি কিনতে দোকানের উদ্দেশে  পা বাড়াতেই গ্রেনেডে বিকট শব্দে স্তব্ধ হয়ে যায় আমার কান। চারদিকে শুধু ধোঁয়া। মুহূর্তেই আরও দু’একটি শব্দের পর আর কিছুই মনে নেই আমার।

ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায় সেদিন গুরুতর আহত হন নাজিম উদ্দিন। পরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ভেবে লাশের সঙ্গে ফেলে দিয়ে ছিল। পরে হঠাৎ জ্ঞান ফিরে তার। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন। 

সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন। তার বুকে ও পায়ে ৪টি মেজর অপারেশন করা হয়েছে। এতেও পুরোপুরি সুস্থ বা চলাফেরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না পাওয়ায় কর্ম ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে তার বুকে ও দুই পায়ে অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়েছে। দ্রুত এগুলো অপসারণ করা খুবই প্রয়োজন। ফলে দিন শেষে রাতে দু’চোখে ঘুম আসে  না তার। এ ছাড়া শীত এলে দেহে স্প্লিন্টারের কারণে অসহ্য যন্ত্রণার পরিমাণের মাত্রা আরও বাড়ে। আবার গরমে রোদে যেতে পারেন না তিনি। সামান্য চুলকানিতে শরীর দিয়ে রক্ত ঝরে। এই জন্য তার আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন নাজমুল হাসান ওরফে নাজিম উদ্দিন। তাই, নাজিম উদ্দিনের সু-চিকিৎসার দাবি জানান এলাকাবাসী। 

 ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী নাজিম উদ্দিন জানায়, ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায় ইতিমধ্যে অনেকে মারা গেছেন। অনেকে আবার আহত অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। এভাবে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন তারা। তাই, আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসহ গ্রেনেড হামলা জড়িতদের দ্রুত বিচার আইনে ফাঁসি কার্যকর করবে সরকার। মরার আগে দেখে যেতে চান তিনি। 

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু জানান, সেদিনের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ভৈরবের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত নাজিম উদ্দিন আজও প্রাণে বেঁচে থাকলেও স্প্লিন্টারের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। ভাবতে খুব কষ্ট লাগে। তা ছাড়া নাজিম বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই, কেন্দ্রীয় ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসাসহ পুনর্বাসন করার দাবি জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত