Ajker Patrika

টুঙ্গিপাড়ার ৩ ইউপি: আত্মগোপনে থেকে তাঁরা চালাচ্ছেন কার্যালয়

সজল সরকার, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ)
আলী আহম্মেদ শেখ, লাল বাহাদুর বিশ্বাস ও মিলিয়া আমিনুল। ছবি: সংগৃহীত
আলী আহম্মেদ শেখ, লাল বাহাদুর বিশ্বাস ও মিলিয়া আমিনুল। ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থেকে কার্যালয় চালাচ্ছেন তিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। এতে করে যথাসময়ে সনদসহ নানা সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

তিনজন হলেন ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ; গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিলিয়া আমিনুল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টুঙ্গিপাড়ার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। কারণ, পাঁচজনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। পরে সরকার চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকা পরিষদগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় পরিপত্র জারি করলে পদ হারানোর আগেই চার চেয়ারম্যান ফিরে আসেন। তাঁদের মধ্যে কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে তাঁর স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। বাকি তিন চেয়ারম্যান ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন। সেবাপ্রার্থীরা তাঁদের দেখা পাচ্ছেন না, এমনকি ফোনও ধরছেন না। আর কখনো ধরলে বিভিন্ন আবেদন ইউপি সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।

বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, মোহাম্মদ মোস্তাইনসহ কয়েকজন জানান, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া ঠিকমতো পরিষদে আসেন না। কয়েক মাস ধরে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য ঘুরেও তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন আবেদনে চেয়ারম্যানের একটি স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে।

জানতে চাইলে ইউপি সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাসখানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দিই আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দু-এক দিন পরপর এসে ফাইলটি নিয়ে যান। চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ।’

ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে জানান, চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে থাকায় বিভিন্ন সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরেও সেবা মিলছে না।

এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া জানান, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ‘মিথ্যা’ মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তারের আতঙ্কে পরিষদে আসছেন না।

কার্যালয়ে না এসে সরকারি নির্দেশ অমান্য করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মিলিয়া বলেন, ‘যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, কিন্তু এলাকাতেই আছি।’ তিনি দাবি করেন, তাঁর এলাকার জনগণ ভোগান্তিতে নেই। কারণ, তাঁর স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে কাগজপত্র নিয়ে স্বাক্ষর করেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি যদি অনুমোদনহীনভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত