Ajker Patrika

জোড়া খুনের আসামি ৩০ বছর পর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ০১
জোড়া খুনের আসামি ৩০ বছর পর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

দোকান লুটের সময় বাধা দেওয়ায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের মালোপাড়ায় বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলাম (৫২)। ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই এ হত্যাকাণ্ড হয়। আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। এর পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। অবশেষে ধরা পড়েছেন র‍্যাবের হাতে। ৩০ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের করে র‍্যাব। 

আজ শুক্রবার কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‍্যাব-১০। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদিদোকানে বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত আরিফসহ পাঁচজনকে ডাবল মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে প্রেরণ করা হয়। নিম্ন আদালত সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরিফসহ পাঁচজনের ডাবল মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। রায় ঘোষণার সময় আরিফ ও মাসুদ পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। 

ঘটনার বর্ণনায় র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিমের নাম শরিফুল। তিনি কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে মুদিদোকানের ব্যবসা করতেন। গুদারাঘাটসংলগ্ন দোকান হওয়ায় প্রায় সময়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা করতেন। তাঁর দুই ছেলে খোকন (তৎকালীন বয়স ৯) ও শাহজাহান (তৎকালীন বয়স ১২) নিয়মিত রাতের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসত এবং তারা তার বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে দোকানে পড়াশোনা করে দোকানেই ঘুমিয়ে পড়ত। ঘটনার দিন শরিফ প্রতিদিনের মতো রাতে দোকানের বেচাকেনা শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। তখন শরিফের দোকানে গ্রেপ্তার আরিফ ও তার অন্য সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরবর্তী সময় তাঁরা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শরিফ বাধা দেন। এ সময় আরিফ ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা তাঁর দুই সন্তান বাবাকে বাঁচাতে আরিফ ও তাঁর সহযোগীদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। 

সেদিন ভিকটিমের দুই সন্তানকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন এবং তিনজনই মারা গেছে ভেবে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা ভিকটিমের দোকান খোলা দেখে সেখানে আসে এবং দোকানের ভেতরে তিনটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে ভিকটিমের বড় ছেলেকে খবর দেয়। ভিকটিমের বড় ছেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় তাঁর বাবা ভিকটিম শরিফ ও তাঁর ছোট ভাই খোকন মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাঁর অপর ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় শাহজাহানকে ভিকটিমের বড় ছেলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন আরিফ। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে নাম ও পরিচয় গোপন করে সরিফুল ইসলাম নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তাঁর ধারণা ছিল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পারবেন। পরে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে আরিফ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরিফুল পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিলেন। 

গ্রেপ্তার আরিফের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত