Ajker Patrika

নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র, মামলা ও চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পরিবার 

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র, মামলা ও চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পরিবার 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় শটগানের গুলিতে আহত হয় এক স্কুলছাত্র। এ ছাড়া পুলিশি মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আহত স্কুলছাত্র সজীব হাসানসহ তাঁর পরিবার। এদিকে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবারের সদস্যরা। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেছে সজীবের দরিদ্র পরিবার। 

জানা যায়, সজীব হরগজ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। গত ২৬ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ ইউনিয়নের হরগজ চরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গুলি চালানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। ওই ঘটনায় সজীব হাসানের ডান হাতে গুলি লাগে। ওই দিন রাতে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীবের হাতের ক্ষত স্থান থেকে অপারেশন করে শটগানের গুলি বের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। ২৭ ডিসেম্বর ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে সজীব। 

সজীবের বাবা আরিফুল ইসলাম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অল্প আয় নিয়ে সংসার চালান। তার ওপর ছেলের চিকিৎসা ভার। এরই মধ্যে মানুষের কাছ থেকে ধার নিয়ে সজীবের ডান হাতে দুটি অপারেশন করা হয়েছে। সুস্থ করতে আরও ৫ লাখ টাকা লাগবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ছেলের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে সমাজের ধনীদের নিকট সাহায্য চেয়েছেন তিনি। পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামি হয়ে সজীবের মা ও বাবা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

এদিকে পুলিশ বলছে তারা কোনো গুলি করেনি, শুধু কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। আর এই স্কুলছাত্রের বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে দুই প্রার্থীর ধাওয়া পাল্টার ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বলে সাটুরিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে। 

এ দিকে সজীবের মা বুলবুলি জানান, সজীবের ডান হাতে পচন ধরেছে। তার চারটি রগ ছিঁড়ে গেছে। এরই মধ্যে তার দুটি অপারেশন করা হয়েছে। বর্তমানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসা অনেক ব্যয় বহুল হবে। আমরা হতদরিদ্র এত টাকা কোথায় পাব। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা করতে না পারলে আমার ছেলের হাত কেটে ফেলতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানান।’ 

কে গুলি করেছে তা জানতে চাইলে বুলবুলি বলেন, বিজয়ী প্রার্থী মোশারফের সমর্থকেরা গুলি করেছে। 

এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সঞ্জয় পাল বলেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোশারফ হোসেন টিউবওয়েল প্রতীক এক ভোটে বিজয়ী হন। এ ফলাফল ঘোষণা করার পর পরাজিত প্রার্থী ফারুক হোসেন তাঁর সমর্থকেরা আমাকে মারধর করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পরিস্থিতি শান্ত করে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’ 

পরাজিত প্রার্থী ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সঞ্জয় পাল টাকার বিনিময়ে টিউবওয়েল প্রতীকে এক ভোট বেশি দেখিয়ে মোশাররফ হোসেনকে বিজয়ী দেখিয়েছেন। আমার এজেন্ট কেন্দ্রে ভোট পুনরায় গণনা করতে বললেও দায়িত্বরত ওই প্রিসাইডিং অফিসার ভোট পুনরায় গণনা করেননি। আমি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর ভোট পুনরায় গণনার জন্য লিখিত আবেদন ও মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেছি।’ 

বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমার সমর্থকেরা কোনো গুলি করেনি। পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মারধর করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার পাঁয়তারা করছেন।

সাটুরিয়া থানার ওসি আশরাফুল আলম বলেন, হরগজ চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থী ফলাফল নিয়ে বিবাদে জড়ান। পরে পরিবেশ শান্ত করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ও বিজয়ী মেম্বার মোশাররফ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত