Ajker Patrika

নেশার টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় ভাইয়ের হাতে বোন খুন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
নেশার টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় ভাইয়ের হাতে বোন খুন

নেশার টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভাইয়ের হাতে সোমা বেগম নামে এক নারী খুন হয়েছেন। গতকাল শনিবার উপজেলার শিবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। 

নিহত ও অভিযুক্ত দুজনই আপন ভাই–বোন। তারা ওই এলাকার মোতালিব মিয়ার সন্তান। নিহত সোমা বেগম বিবাহিত, তার স্বামী ও দুইটি শিশু সন্তান রয়েছে। 

পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, বাবুল মিয়া (৪৪) একজন নেশাগ্রস্ত। তিনি প্রায়ই নেশার টাকা এবং নিজের সম্পত্তি চেয়ে মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া বাধায়। শনিবার বিকেলে মা আয়েশা বেগমের সঙ্গে সম্পত্তির ভাগ ও নেশার টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় বাবুল মিয়ার। বাগ্‌বিতণ্ডার এক ফাঁকে মায়ের শরীরে আঘাত করে বাবুল। 

এই দৃশ্য দেখে সোমা বেগম বাধা দেয় এবং তর্কে জড়ায়। মায়ের পক্ষ নিয়ে কেন সোমা প্রতিবাদ করল, এই রাগে-ক্ষোভে তাকে গাছের ডাল দিয়ে মাথায় একাধিক আঘাত করে বাবুল। এতে জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সোমা। 

এ ঘটনায় ছোট বোন বিউটি এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করেন বাবুল। তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বাবুল। 

পরে আহতাবস্থায় সোমাকে শম্ভুপুর গ্রামের রেলগেট এলাকার এক পল্লি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন। বাড়ি ফেরার পর আবার বমি শুরু হলে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নিলে চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে রাত ১০টার দিকে সোমার মৃত্যু হয়। 

এ বিষয়ে বিউটি আক্তার বলেন, ‘আমার বড় ভাই বাবুল মাদকসেবী। তিনি নেশা করে এসে আমার মাকে প্রায়ই মারধর করত। এই জন্য ভাইকে কয়েক বছর আগে বাবা-মা বাড়ি থেকে বের করে দেন। সে পরিবার নিয়ে শম্ভুপুর রেলগেট এলাকায় থাকেন। তিনি প্রায় সময় মায়ের কাছে এসে নেশার টাকার জন্য বলত ও সম্পত্তির ভাগ চাইত। মাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিত।’ 

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে মাকে নেশার টাকা ও সম্পত্তির জন্য চাপ দেয়। একপর্যায়ে মাকে মারধর করে। পরে আমার বড় বোন সোমা বাধা দিলে তাকে গাছের ডাল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তখন প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে বাবুল পালিয়ে যায়।’ 

বিউটি আক্তার আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বোন (সোমা) শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বিকেলে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায়। আমার বোনের তিন বছর ও দেড় বছর বয়সী দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্বামীর নাম শাহীন মিয়া। আমি আমার ভাই বাবুল মিয়ার ফাঁসি চাই।’ 

ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবুল সম্পত্তি ভাগের জন্য প্রায় সময় তার মাকে মারধর করত। সে এর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার দিন বাবুল যখন তার মাকে মারতে যায়, তখন বোন বাধা দিলে সে তাকেও আঘাত করে আহত করে। পরে তার মৃত্যু হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিকে গ্রেপ্তার করি আমরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত