Ajker Patrika

কর্মী সংকটে বন্ধ করোনা চিকিৎসা

অনিক হোসেন, ঢাকা
কর্মী সংকটে বন্ধ করোনা চিকিৎসা

করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে গত বছর করোনা রোগীর সেবা দিতে পুরান ঢাকার নয়াবাজারের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এগিয়ে এসেছিল। তখন করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল সংযুক্ত করেছিল। গত বছরের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে জনবল ফেরত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, চিকিৎসক-নার্স না থাকায় গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে তারা গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার করোনা রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়।

চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে ১৫০ শয্যার মধ্যে ১১০টি করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বারবার জনবলের চাহিদা দিলেও জনবল পায়নি। ফলে জনবল সংকটের কারণে এখনো কোভিড সেবা চালু করতে পারেনি হাসপাতালটি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত সাতবার জনবলের চাহিদাপত্র দিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। তাই এখন সম্পূর্ণ নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে সেবা চালু করেছি।’

পরিচালক বলেন, সর্বশেষ করোনার সেবা চালুর জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ ন্যূনতম ৬৫ জনের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ১৪ জন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ৫ জন, আইসিইউ সেবায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০ জন নার্স, অবেদনবিদ ৭ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১১ জন, ওয়ার্ডবয় ১৬ জন এবং কম্পিউটার অপারেটর দুজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া না পেয়ে ৩ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের নির্দেশে নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে সেবা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে মহানগর জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালে সাধারণ রোগীর তেমন চাপ নেই। নিচতলার দুপাশে করোনার টিকা দেওয়ার বুথ বসানো হয়েছে। এক পাশে করোনা টিকার প্রথম ডোজ এবং অন্য পাশে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, সুসজ্জিত আইসিইউ ও এইচডিইউ বেডগুলো খালি পড়ে আছে। তিনতলার পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে আগে ছিল করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড। এখন সেখানে দুজন ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে তিনজন রোগী ভর্তি আছেন। বাকি বেডগুলো খালি পড়ে আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ পুরো খালি। কয়েকটি কেবিনে রোগী ভর্তি থাকলেও অধিকাংশ কেবিনই ছিল তালাবদ্ধ।

হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫০ শয্যার হাসপাতালে এখন রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ২৪ জন। করোনার সেবা দেওয়ায় অনেকেই এখানে আসেন না। অনেকেই এখনো জানেন না, এখন এই হাসপাতালে করোনার সেবা দেওয়া হয় না। এ জন্য সাধারণ রোগীর তেমন চাপ নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কোভিড সেবা ব্যতীত হাসপাতালের সাধারণ রোগীর সেবা দেওয়ারও পর্যাপ্ত জনবল নেই। হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী লোকবল থাকার কথা ১৬৬ জন, আছে মাত্র ৭৩ জন। চিকিৎসক, নার্সসহ মোট পদ খালি ৯৩টি। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৫ জন। নার্স থাকার কথা ৩৭ জন। আছে মাত্র নয়জন, সংযুক্তিতে আরও আছে পাঁচজন। সব মিলিয়ে নার্স আছে ১৪ জন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটি সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকলেও চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, হাসপাতালটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। কিন্তু জনবল নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাই কিছুটা সময় লাগছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত