Ajker Patrika

মৃত নারীকে আইসিইউতে রেখে বিল বাড়ানোর অভিযোগ শিন-শিন জাপান হাসপাতালের বিরুদ্ধে

নুরুল আমিন হাসান ,উত্তরা (ঢাকা)
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৩৭
Thumbnail image
রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে শিন-শিন জাপান হাসপাতাল লিমিটেড। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিল বাড়ানোর জন্য মৃত নারীকে জীবিত বলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর উত্তরার শিন-শিন জাপান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছে। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ।

হাসপাতালটি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। গত সোমবার রাতে এই অভিযোগ তোলেন মৃতের স্বজনেরা। মৃত ওই নারীর নাম স্মৃতি আক্তার (২২)। তিনি ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কুশুরা গ্রামের বাবুল মৃধার মেয়ে। তাঁর স্বামী মাসুদ মিয়া নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যায় ধামরাই থেকে স্বামী মাসুদ রানার সঙ্গে স্মৃতি মোটরসাইকেলে করে নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে গাজীপুরের মীরের বাজার এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মাথায় আঘাত পান স্মৃতি আক্তার। পরে রাত ৮টার দিকে উত্তরার শিন-শিন জাপান হাসপাতাল লিমিটেডে তাঁকে ভর্তি করানো হয়।

স্মৃতি আক্তারের বড় বোন লাভলী আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্মৃতি রোববার রাতেই মারা গেছে। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন জীবিত বলে চিকিৎসার নামে আইসিইউতে রেখে দিছে। আর আমাদের দিয়ে একের পর এক ওষুধ কিনাইছে।’

স্মৃতির দেবর সাঈদ ও ভাশুর বকুল হোসেন মন্টু অভিযোগ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোমবার সকালে আমরা স্মৃতিকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন আমাদের নিতে দেয়নি। রোগীর সঙ্গে দেখাও করতে দেয়নি। পরে আমরা জোর করে বিকেলে আইসিইউতে ঢুকেছি। হাসপাতালের লোকজন পাম্প করে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনা) তাকে জীবিত বলছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, স্মৃতির শরীর ঠান্ডা হয়ে হলুদ হয়ে গেছে। হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেছে। তবু আইসিইউর লোকজন বলছে, জীবিত আছে আর ওষুধ নিয়ে আসার জন্য তালিকা ধরিয়ে দিচ্ছে।’

তাঁরা বলেন, ‘স্মৃতির বড় বোন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। পরে উনি উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশকে জানালে পুলিশ আসার পর হাসপাতালের লোকজন স্মৃতিকে মৃত ঘোষণা করেন।’

হাসপাতালে উপস্থিত থানার পুলিশ বলেছে, নিহতদের স্বজনেরা চিকিৎসায় অবহেলা, ঠিকমতো ওষুধ না দেওয়াসহ নানান অভিযোগ করেছেন।

হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে, এরপরও কর্তৃপক্ষ তাঁকে আইসিইউতে রেখে দিয়েছে। তাই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে শিন-শিন জাপান হাসপাতাল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. শরীফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে কারণে আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার কোনো অবহেলা নয়, হাসপাতালের বিল না দেওয়ার জন্যই তারা (রোগীর স্বজন) টালবাহানা করছে।’

প্রায় ৯ মাস আগে মাসুদ রানার সঙ্গে বিয়ে হয় স্মৃতি আক্তারের। দুর্ঘটনার বিষয়ে মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতে চাকরি করি। সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। মীরের বাজারে রাস্তার কাজ চলছে। নতুন রাস্তায় কার্পেটিং করার কারণে উঁচু হয়ে ছিল। চলতি অবস্থায় হঠাৎ করে বুঝে উঠতে পারিনি। খুব কাছে যাওয়ামাত্রই স্মৃতিকে বলেছি, আমাকে শক্ত করে ধরো। কিন্তু ধরার আগেই ঝাঁকুনি খেয়ে সে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত