Ajker Patrika

বিজয় দিবসের পোস্টারে আবু সাঈদের ছবির সমালোচনা করা সেই মুক্তিযোদ্ধা চাইলেন ক্ষমা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
Thumbnail image
কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া (ডান থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি ব্যবহারের সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ক্ষমা চান। একই অনুষ্ঠানে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন বাঁক স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল করেছি। যার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। শহীদ আবু সাঈদ আমাদের সন্তানের মতো। আবু সাঈদ যদি শহীদ না হতো তবে আজকে বাংলাদেশের এই পটপরিবর্তন হতো না। আমি মনে করি আবু সাঈদ শহীদ হয়ে একটা রাস্তা আমাদের শিখিয়ে গেছে যে বাংলাদেশ এখন অন্য পথে চলছে। মানুষের কথা বলার অধিকার দিচ্ছে। আবু সাঈদের আত্মত্যাগে আমরা দিনের পর দিন যেন আরও উন্নতির দিকে যেতে পারি সেই কামনা আমি করি।

ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, মহান বিজয় দিবসের প্রোগ্রামে দেওয়া আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলাম। এ বিষয়ে যেন কারও মনে আঘাত না লাগে সে জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ভুলবশত বলে ফেলছি। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম জানু, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এম মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান।

মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার কে এম মাহবুব আলম বলেন, স্বৈরাচার যেভাবে শুরু করছিল আস্তে আস্তে সমগ্র বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলতো। ‘২৪-এ যারা আত্মত্যাগ করেছে ওই আত্মত্যাগের জন্য তাঁদের শ্রদ্ধা করা আমাদের দায়িত্ব। ইদ্রিস আলী বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত। কী বলা উচিত তিনি বুঝতে পারেন নাই। তিনি আপনাদের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমরা আশা করি এই বিষয় আর কোনো জায়গায় প্রভাবিত হবে না। আপনাদের মধ্য দিয়েই এটার সমাপ্তি ঘটবে। ইদ্রিস আলীর ওই বক্তব্যটা আমরা গ্রহণ করি না। আমরা সকলেই ইদ্রিসের বক্তব্যে প্রতি ধিক্কার জানিয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম জানু বলেন, আবু সাঈদ অবশ্যই একজন শহীদ। ‘৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। কিন্তু গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন গণতন্ত্র কায়েম করেছে ও বাঁক স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। ইদ্রিস আলী তাঁর বক্তব্যের ভুল স্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এ বিষয়ে আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ ঘরানার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সাজানো হয়।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী ঘরানার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ঘরানার মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য দেন। ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বক্তব্যে বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি ব্যবহারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘আবু সাঈদ শহীদ হয়েছে, কার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে? কোন দেশের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয়?’ ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘তাঁরা (আবু সাঈদরা) আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করেছে। আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে যদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দিত, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’ এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। এ বিষয় জানাজানি হওয়ার পর আলোচনার সৃষ্টি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত