Ajker Patrika

রঙের ছটায় বদলে গেল পরিত্যক্ত সুইমিংপুল

ইমন ইসলাম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৪৭
Thumbnail image

কিছুদিন আগেও যে ময়লার ভাগাড় ছিল দৃষ্টিকটু ও বিরক্তির কারণ, আজ তা সেজেছে রঙিন সাজে। নানান চিত্র ফুটে উঠেছে পরিত্যক্ত সুইমিংপুলের দেয়ালে। দৃষ্টিনন্দন এসব চিত্রকর্ম নজর কাড়ছে সবার। এ তো শুধু রঙের খেলা নয়। এতে মিশে আছে চিত্রশিল্পীদের পরিশ্রম আর সৃষ্টিশীলতা। তবে তাঁদের কষ্ট যে সার্থক, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ এসব দেয়ালচিত্র দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই। 

একসময় এড়িয়ে চললেও শিক্ষার্থীদের জন্য এখন এই এলাকা হয়ে উঠেছে প্রশান্তিময় কিছুটা সময় কাটানোর এক জায়গা। একটি সুন্দর উদ্যোগ কীভাবে একটি এলাকাকে বদলে ফেলতে পারে, ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত সুইমিংপুল তার বড় উদাহরণ। 

গ্রামবাংলা, আধুনিক নগরজীবনসহ নানা বিষয় মূর্ত হয়ে উঠেছে শিল্পীর তুলিতে। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অদূরে যে জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ছিল, সেখান এখন রঙিন সব ছবি টেনে আনছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করছেন। 

পরিত্যক্ত এই সুইমিংপুল যেটা এখন ভরে গেছে গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্রে, তার অবস্থান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল। পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পাসের একমাত্র পুলটি। সুইমিংপুলে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে তলানিতে জমতে থাকে নোংরা পানি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ার ফলে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয় লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অবকাঠামো। এদিকে সুইমিংপুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভৌগোলিক কারণেই তা রূপ নেয় পরিত্যক্ত স্থানে। 

রনবীর বিখ্যাত টোকাই চরিত্র উঠে এসেছে একটি দেয়ালচিত্রে। বলা চলে, অনেকটা রাতারাতি এই পুলের পরিবর্তন এনে দিয়েছেন কয়েকজন চিত্রশিল্পী, যার সুবিধা পাচ্ছে এখন পুরো ক্যাম্পাসবাসী। পুরোনো জরাজীর্ণ এই পুল দৃষ্টিনন্দন করতে উদ্যোগ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মামুর। তাঁর উদ্যোগে একদল তরুণ নেমে পড়েন কাজে।

মাত্র এক মাসের মধ্যে জীর্ণ দেয়ালকে রঙিন করে তুলেছেন শিল্পীরা। ছবি: লেখকমাত্র এক মাসের ব্যবধানে জীর্ণ দেয়ালে ফুটেছে রঙিন ছবি। পুলের দুই পাশের দেয়ালে জায়গা পেয়েছে বাহারী সব চিত্রকর্ম। দেয়ালে রং করার পাশাপাশি রং-তুলি কেনা থেকে শুরু করে এর পেছনের সব খরচ বহন করেছেন এই শিল্পীরা নিজেদের পকেট থেকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সুষ্ঠু পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, তাই তাদের এই পদক্ষেপ নেওয়া। দীর্ঘদিনের অপরিচ্ছন্ন নোংরা পুলটি এখন আবর্জনামুক্ত। এখন এই পুলের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন বেশ স্বস্তিতে। পুলের পাশে বিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ মামুর বলেন, ‘এর আগে ক্যাম্পাসের দেয়ালে অনেক দেয়ালচিত্র এঁকেছি আমরা, কিন্তু সেটা ছোট পরিসরে, গুটি কয়েকজন মিলে। ওই কাজগুলো করতে গিয়েই মাথায় আসে যে জাহাঙ্গীরনগরের চারুকলা বা অন্যান্য বিভাগের যেসব শিক্ষার্থী ছবি আঁকে, তাদের নিয়ে একটি দেয়ালচিত্র উৎসব করার। সেই ভাবনা থেকেই এটার পরিকল্পনা করি। 

শিল্পীরা নিজেদের খেয়ালখুশিতে রং ছড়িয়ে নানাভাবে রঙিন করেছেন পরিত্যক্ত এই সুইমিংপুলটা। ছবি: লেখকতিনি বলেন, ‘আঁকার জন্য পরিত্যক্ত সুইমিংপুল বাছার মূল কারণ হচ্ছে, জায়গাটা বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত, মানুষ প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলে একে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করে রেখেছিল। সেই সব আবর্জনা পরিষ্কার করে এখানে আঁকার একটা উদ্দেশ্য হলো মানুষকে একটা বার্তা দেওয়া যে আমরা প্লাস্টিকসহ অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশ যেন নষ্ট না করি। আমাদের আশপাশ আমরা অপরিষ্কার না করলে কখনোই অপরিষ্কার হবে না।’ 

মজা করার ছলে আঁকা হয়েছে সচেতনতামূলক কার্টুন। ছবি: লেখকযেসব ছবি আঁকা হয়েছে, সেসবের মধ্যে কিছু ছবি সরাসরি বার্তা বহন করছে। যেমন রনবীর বিখ্যাত টোকাই চরিত্র নিয়ে আঁকা একটি দেয়ালচিত্রে ফুটে উঠছে যে টোকাই একটি কাটা গাছে হেলান দিয়ে আরাম করে শুয়ে আছে, তার চোখে ভিআর সেট, সেখানে লেখা ‘উন্নয়ন’। বর্তমানে যেভাবে পরিবেশ নষ্ট করে, গাছ কেটে উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং এটা নিয়ে কারও তেমন কোনো বিকার নেই, সেটার দিকেই আসলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। 

একসময় এড়িয়ে চললেও শিক্ষার্থীদের জন্য এখন এই এলাকা হয়ে উঠেছে প্রশান্তিময় কিছুটা সময় কাটানোর এক জায়গা। এর বাইরে গ্রামবাংলার জীবন কিংবা আধুনিক নগরজীবন নিয়েও আঁকা হয়েছে ছবি ৷ এ ছাড়া অসংখ্য আঁকিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশিতে রং ছড়িয়ে নানাভাবে রঙিন করেছেন পরিত্যক্ত এই সুইমিংপুল। 

দেয়ালচিত্র গুলো দেখে সবাই খুবই উচ্ছ্বসিত। প্রায় সবাই খুব প্রশংসা করছে এবং প্রচুর ছবি তুলছে। এটা আসলেই খুব আনন্দের। তবে দর্শনার্থী যাঁরা ছবি তুলছেন বা দেখতে আসছেন, তাঁদের প্রতি মামুরের অনুরোধ, তাঁরা যেন দেয়ালে পা তুলে না দাঁড়ান কিংবা দেয়ালে পা তুলে ছবি না তোলেন। এতে ছবিগুলো জুতোর ময়লায় নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাঁরা যেন অবশ্যই ময়লা-আবর্জনা সুইমিংপুলে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে। 

শিল্পীদের সৃষ্টিশীলতা ফুটে উঠেছে বিভিন্ন দেয়ালচিত্রে। ছবি: লেখকবিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী খুরশিদা জাহান খুশি ঘুরতে যান পুরোনো সুইমিংপুল প্রাঙ্গণে। এর নয়া সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সুইমিংপুলের প্রতিটি দেয়াল এক অনন্য রঙের সাজে সজ্জিত হয়েছে। এটি দেখে আমিসহ ক্যাম্পাসের অনেকেই বিমোহিত। দেয়ালে আঁকা নানা রঙের চিত্র এবং তার সঙ্গে বিকেলে সূর্যের আলো যখন সুইমিংপুলের পানিতে প্রতিফলিত হয়, সেটা দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। আমার গত ছয় বছরের ক্যাম্পাস লাইফে জাবির সব থেকে সুন্দর কিছু দেখে থাকলে সেটা সুইমিং পুলের বর্তমান সাজ।’ 

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত