Ajker Patrika

নৌকা বিক্রি নেই, ভালো নেই কারিগরেরা

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ০২
নৌকা বিক্রি নেই, ভালো নেই কারিগরেরা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রতি বছর বর্ষা এলেই বেড়ে যায় নৌকার চাহিদা। তাই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নৌকা তৈরি করতে দেখা গেলেও বরাবরই আওড়াখালী বাজার এর জন্য আদর্শ স্থান। দূর-দূরান্ত থেকেও এখানে ব্যাপারীরা নৌকা কিনতে আসেন। প্রতি বর্ষায় বিভিন্ন আকারের নৌকায় ভরে ওঠে আওড়াখালী বাজার। কিন্তু এই বাজারের সেই চেনা রূপ এবার আর নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার আওড়াখালী বাজারে নৌকা তৈরির বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে, যাঁরা নিজেরা নৌকা বানিয়ে বিক্রি করেন। বর্ষার ভরা মৌসুমেও কারিগরদের নেই নৌকা বানানোর ধুম। দু-একজন যা-ও বা বানাচ্ছেন, তাঁরা সেগুলো বানিয়ে ফেলে রাখছেন ক্রেতার অভাবে। 

একসময় বর্ষার আগমুহূর্তে আওড়াখালী বাজারে নৌকার কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত থাকত না। এখন দায়সারাভাবে চলছে নৌকা মেরামতের কাজ। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় মনোযোগ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। 

কথা হয় নৌকার কারিগর এনামুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁদের বংশের সবাই নৌকা বানানোর কাজের জড়িত। মূলত বাবার কাছ থেকে শেখা এই পেশার মাধ্যমেই তিনি সংসার চালান। গত বছরও নৌকা বানিয়ে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার বেচাকেনা একেবারেই নেই বললেই চলে। যে কয়টা নৌকা তৈরি করেছেন, সেগুলোও পড়ে রয়েছে। 

কারিগর মো. বিল্লাল বলেন, ‘আমরা সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, বর্ষা মৌসুম এলে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার ঠিক উল্টো চিত্র। কয়েকটা নৌকা বানিয়েছি ঠিকই, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। ধারণা করছি, মানুষ এখন লোহার নৌকার দিকে ঝুঁকছে, যে কারণে আমাদের বেচাকেনা কমে গেছে।’ 

কালীগঞ্জের আওড়াখালী বাজারের একটি নৌকা তৈরির দোকানপঞ্চাশোর্ধ্ব মো. নাজিম উদ্দিন নিজের দোকানে নিজেই কারিগর। এ বছর তিনি তাঁর মূলধন হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে রাগে-ক্ষোভে এই পেশাই ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, তাঁর যেই পুঁজি ছিল, সেগুলো দিয়ে উন্নতমানের কাঠ কিনে এনেছিলেন ভালো কিছু নৌকা বানানোর জন্য। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো দোকানে পড়ে আছে। এদিকে দোকানের ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। সবকিছু মিলিয়ে তিনি পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। 

আওড়াখালী বাজার কমিটির সহসভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, বাজারটি নৌকা তৈরির জন্য এ অঞ্চলে বিখ্যাত। আমার নিজেরও এখানে দোকান রয়েছে। এ বছর বেচাকেনা নেই বললেই চলে। মানুষ এখন লোহার নৌকার দিকে ঝুঁকছে। আমার দোকানে আগে চার-পাঁচটা নৌকা বানানো হতো। কিন্তু এখন দিনে একটা নৌকা বানালেও পড়ে থাকে।’ 

এ ব্যাপারে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী সারোয়ার হোসেন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই কাঠের নৌকা। কালের পরিক্রমায় মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়। এই শিল্পের বেলায়ও ঘটেছে একই ঘটনা। যে কারণে মানুষ এখন আর আগের মতো কাঠের নৌকা ব্যবহার করতে চায় না। হয়তো এ জন্যই এই শিল্পে ধস নেমেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নৌকা প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নৌকার বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই আধুনিক ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন চিন্তা করে, কম দামে কীভাবে বেশি কিছু পাওয়া যায়। সে জন্য তারা লোহার নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে, যেটা সহজলভ্য কাঠের নৌকায় সম্ভব নয়। তবে নৌকা আমাদের শিল্পের একটা অংশ আর এর কারিগরেরা তার শিল্পী। সুতরাং আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে এই শিল্পকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত