Ajker Patrika

বাসে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ ও অপহরণ থেকে বাঁচাবে স্মার্ট পোশাক

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৩০
বাসে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ ও অপহরণ থেকে বাঁচাবে স্মার্ট পোশাক

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শীত যেন উবে গেছে মানুষের ভিড়ে! সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে দর্শনার্থী সংখ্যা এমনিতেই বেশি। তার ওপর ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার শেষ দিন। নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্য ও উদ্ভাবনী যন্ত্র দেখতে এবং সেগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় ছিল ব্যাপক। 

ভিড় ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে যেতে হলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে উদ্ভাবনী কর্নারের দিকে। দেখা গেল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চেয়ার–টেবিল পেতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সাজিয়ে বসে আছেন। চেনা-অচেনা এসব যন্ত্র ঘিরে তাদের ব্যাপক উত্তেজনা। 

একটি টেবিল ঘিরে বেশ কয়েকজনের জটলা দেখে উঁকি দিতে চোখে পড়ল একটি ল্যাপটপ আর কিছু তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টেবিলে। পাশেই লাল প্লাস্টিকের বাক্সে আরও কিছু যন্ত্রপাতি এবং একটি পোলো টি–শার্ট বিছিয়ে রাখা। টি–শার্টের গায়ে লাগানো কয়েকটি সেন্সর। কার্ডগুলোতে যুক্ত তিনটি তার আবার যুক্ত করা হয়েছে ওই লাল বাক্সে। 

একটি কাগজে ইংরেজিতে লেখা ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ডিটেকশন উইথ স্মার্ট ড্রেস।’ অর্থাৎ যৌন হয়রানি চিহ্নিতকরণ স্মার্ট পোশাক। স্টলে বসে ছিলেন নোমান ফয়সাল নামে এক যুবক। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি জানালেন, রাস্তায়, বাসে বা বিভিন্ন জায়গায় যৌন হয়রানি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এটি রোধে তাঁরা বিশেষ একটি পোশাক উদ্ভাবন করেছেন। এই পোশাক মানুষের স্পর্শের তারতম্য নির্ণয় করে যৌন হয়রানিমূলক স্পর্শ চিহ্নিত করবে। হয়রানির শিকার ব্যক্তি ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেবে স্থানীয় প্রশাসন ও ভুক্তভোগীর স্বজনদের! 

নোমান ফয়সাল সহজ করে জানালেন কীভাবে এই পোশাক কাজ করবে, সে বিষয়ে। এই পোশাকে চারটি প্রেশার (চাপ) সেন্সর কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। একটি মানুষের চারটি স্পর্শকাতর অঙ্গ বিবেচনা করে এই পোশাকের সেসব অংশে সেন্সর কার্ডগুলো লাগানো থাকে। সেসব অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ হলে ভুক্তভোগী নীরব থাকলেও নোটিফিকেশন চলে যাবে স্থানীয় প্রশাসন বা ভুক্তভোগীর স্বজনদের কাছে। 

এই স্মার্ট পোশাক নোটিফিকেশন পাঠানোর মাধ্যমে বাঁচাবে অপহরণের হাত থেকেও। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন ভুক্তভোগী। 

শুধু সেন্সর কার্ড, জিএসএম মডিউল এবং জিপিএস ট্র্যাকারের মতো ছোট ছোট কয়েকটি যন্ত্র দিয়েই এমন স্মার্ট পোশাক বানিয়েছেন একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। নিজেদের উদ্ভাবিত এমন আরও চারটি যন্ত্র প্রদর্শন করতে মেলায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে বানিয়েছেন এসি লাইট ডিমার। মোবাইল ফোনে একটি অ্যাপ ইনস্টল করে ঘরের ওয়াইফাই ও ফোনের ডেটা ব্যবহার করে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কমানো বাড়ানোর মাধ্যমে লাইট বাল্বের উজ্জ্বলতা কমানো বাড়ানো যাবে। ফলে একই লাইট বাল্ব ডিম লাইট ও স্বাভাবিক লাইট হিসেবে। এই যন্ত্র দিয়েই বিছানায় শুয়ে বা ঘরে না থেকেও লাইট, ফ্যান, টিভি, ফ্রিজের মতো যন্ত্রগুলো চালু বা বন্ধ করা যাবে। মাত্র ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে এই যন্ত্র। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রায় কুড়ি জন তৃতীয় ও চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীর বানানো মোট ৫টি যন্ত্র প্রদর্শনীর জন্য মেলায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে স্মার্ট হেলথ নোটিফিকেশন সিস্টেম। ছোট্ট একটি বাক্সের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা, হার্ট বিট, ইসিজি ও অক্সিজেন পরিমাপক যন্ত্র। 

প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুবিধা সম্পন্ন এসব ছোট ছোট যন্ত্রের এমন অন্তত ৩০টি উদ্ভাবক দলের পদচারণায় মুখর ছিল এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার এই অংশ। নানা সফটওয়্যার ভিত্তিক যন্ত্র তো আছেই, সেই সঙ্গে ভিন্ন ধরনের রোবট উদ্ভাবন করে প্রদর্শনীর জন্য এসেছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারের একদল শিক্ষার্থী। সেলফ ব্যালান্সিং রোবট, সেলফ ব্যালান্সিং কিউব এবং মাস্ক বটের মতো এসব যন্ত্র বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা। 

শুধু উদ্ভাবনী কর্নারে নয়, কার্নিভ্যাল পয়েন্টে দেশ, বিদেশের নামকরা সব ব্র‍্যান্ডের আইটি, টেকনোলজি ও সেলফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও নতুন নতুন যন্ত্র প্রদর্শনীর জন্য এসেছিলেন। 

মেলায় আয়োজন করা হয়েছিল প্রাথমিক পড়ুয়া শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের স্টলে গিয়ে দেখা গেল, ইন্টারেকটিভ ডিসপ্লে প্যানেল নামে একটি পণ্য ঘিরে দর্শনার্থীদের বেশ কৌতূহল। এটি মূলত অ্যান্ড্রয়েড সুবিধাসম্পন্ন প্রোজেক্টর। প্রোগ্রাম বদলে ব্যবহার করা যাবে শ্রেণিকক্ষের হোয়াইটবোর্ডের মতো। হাই রেজুলেশনের ওয়েব ক্যামেরা সমৃদ্ধ এই ডিসপ্লে ক্লাস, করপোরেট অফিসসহ বিভিন্ন কনফারেন্সে ব্যবহারের কথা বিবেচনায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানালেন স্টলের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সেলস অফিসার ইমরান হোসাইন। পণ্যটির দাম রাখা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৫০ টাকা। সঙ্গে এক বছরের ওয়ারেন্টি।

এ ছাড়া বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং পণ্য, যেমন— রাউটার, সিসি ক্যামেরা, আইপি ফোনের মতো পণ্যগুলোও প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিশেষ মূল্য ছাড়ে বিক্রি হতে দেখা গেছে মেলায়। কার্নিভ্যালের ২৮ নম্বর স্টল স্কাইলিংক ইন্টারন্যাশনালে গিয়ে দেখা যায় এসব পণ্য ও বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং এক্সেসরিজের বিষয়ে দর্শনার্থীদের বেশ আগ্রহ। তবে গত কয়েক দিনে এই স্টলের পণ্যগুলোর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে রাউটার। প্রতিষ্ঠানটি সব পণ্যই অফার দিয়ে বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা এবং আইপি ফোনও বিক্রি হয়েছে উল্লেখ করার মতো।

মেলায় আসা যুবক ও তরুণ দর্শনার্থীদের হালনাগাদ স্মার্টফোন ও গেমিং সফটওয়্যারের প্রতি আগ্রহ দেখা গেছে বেশি। উত্তরা থেকে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফনান রহমান। নতুন ও আপডেট ফিচারের স্মার্টফোনের নেশা তাঁর। তবে আশানুরূপ নতুন স্মার্টফোন মেলার স্টলের প্রদর্শনীতে তাঁর চোখে পড়েনি বলে জানালেন এই তরুণ। নির্দিষ্ট কিছু গেমিং সফটওয়্যারের সন্ধানে মেলায় এসেছিলেন গালিব আহমেদ। কয়েকটি স্টল ঘুরেছেন, তবে পাননি প্রত্যাশার পণ্য। 

শেষ দিন সকালে মেলায় আয়োজন করা হয়েছিল প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়া শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় বিভিন্ন স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শিরোনামের এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তিন দিনের এই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। শেষে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে শিশুকে গলা কেটে হত্যা, সহপাঠী আটক

নোয়াখালী প্রতিনিধি
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নে মাথায় টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দিন (১৩) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই সহপাঠীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবু সায়েদকে (১৫) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসায় ঘুমের মধ্যে ছুরি দিয়ে গলা কেটে নাজিমকে হত্যা করা হয়।

নিহত নাজিম উদ্দিন ওই উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের ওবায়দুল্যার ছেলে।

পুলিশ জানায়, নাজিম ও সায়েদ ওই মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র। এর মধ্যে নাজিম ২২ পারা কোরআন মুখস্থ শেষ করে এবং সায়েদ ২৩ পারা শেষ করে। গত ১০-১৫ দিন আগে টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম ও সায়েদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে হুজুর দুজনের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেন। কিন্তু সায়েদের মধ্যে রাগ থেকে যায়। তাই সে বাজার থেকে কিছুদিন আগে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি নতুন ছুরি কিনে নিয়ে আসে এবং নাজিমকে হত্যার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। রোববার রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমের মধ্যে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করে সায়েদ। গোঙানি শুনতে পেয়ে হুজুর ও অন্য ছাত্ররা জেগে যায়। পরে ছুরিসহ সায়েদকে আটক করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু সায়েদকে আটক করে। সোমবার ক্রাইমসিনের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেট্রোরেল বন্ধের প্রভাব, সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক

রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো লাইনের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে দুর্ঘটনায় এক পথচারী নিহত ঘটনায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে আজ সোমবার সকাল থেকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) লাইন মেরামত শুরু করে। এর ফলে খেজুরবাগান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক আংশিকভাবে বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল রোববার পথচারী নিহতের ঘটনার পর মেরামতের কাজ শুরু হলে সকাল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, রেইনবো, বিজয় সরণি, উড়োজাহাজ মোড় এবং আগারগাঁও এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অফিস সময়ে এসব রাস্তায় যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রী ও অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

তেজগাঁও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের আংশিক বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন ধরনের বিকল্প যানবাহনে রওনা হচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া রেইনবো ক্রসিং এলাকায় একটি বড় লরি নষ্ট হয়ে পড়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামা যান চলাচল ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেক রোড এলাকায় হেঁটে, পিকআপ ও ট্রাকযোগে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম হওয়ায় ওই সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

জনগণের ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে বিকল্প ডাইভারশন চালু করে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে বিভাগটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহতের পর বন্ধ থাকা মেট্রোরেল সেবা আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করছে।

আজ ঢাকা ম্যাস টারজেট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএমটিসিএল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সকাল ১১টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুনরায় চালু করা হয়েছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিয়ার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয় এবং দু’জন আহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টার দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়।

তবে বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত অংশে মেরামত কাজ চলমান থাকায় গতকাল দুপুর থেকে ওই অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকালেই মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পর পুরো রুটে সেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেছারাবাদের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সাগরকান্দা বাজার হয়ে নাথপাড়া থেকে জিনুহার এবং দুর্গাকাঠি রাস্তার খালের ওপর থাকা লোহার ভিমের স্লিপারের তিনটি সেতু (পুল) বর্তমানে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর সুপারিগাছ ও বাঁশের হাতল দিয়ে কোনোভাবে পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সাগরকান্দা স্কুলের পরের নাথপাড়ার প্রথম সেতুটি। তবে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এই তিনটি সেতু সাগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিন গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর আগে বন্যায় গাছ পড়ে নাথপাড়া প্রথম সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার সেতুটি মেরামতের কথা বলে এর লোহার ভিম, অ্যাঙ্গেল ও স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যান। কিন্তু এরপর আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একই কারণে বাকি দুটি সেতুও সংস্কারের অভাবে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান মৃধা বলেন, ‘এই রাস্তার সবচেয়ে ভয়াবহ পুল নাথপাড়ার প্রথমটি। পুলের অবস্থা এত খারাপ যে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে নিতে পারি না। চেয়ারম্যানরা মেরামতের নামে লোহার ভিম খুলে নিয়ে গেছে, তারপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। একই অবস্থায় বাকি দুটি পুল রয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়া উদ্দিন তৌহিদ বলেন, ‘এই রাস্তাটি তিনটি গ্রামের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ পথ। এখানে তিনটি মন্দির ও একটি স্কুল আছে। পুল না থাকায় আমরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।’

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দা বাজার থেকে এক কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক এবং এ তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কাজটি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার হয়, যার মালিক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাই মিরাজুল ইসলাম। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় ঠিকাদারের লাইসেন্স জটিলতা দেখা দিলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন ব্যাপারী বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মামলার কারণে কাজ হয়নি। পুলের লোহার ভিম ও অ্যাঙ্গেল কারা খুলে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই।’

সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ বলেন, ‘কোটি টাকার ওপরে টেন্ডার হয়েছিল। পরে ঠিকাদারি লাইসেন্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।’

স্থানীয়দের জোর দাবি, দ্রুত সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং তিনটি গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত