Ajker Patrika

বাজারে আগুন: একটু সবজি খেয়ে বাঁচব, সেই উপায়ও নেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১০: ২৩
বাজারে আগুন: একটু সবজি খেয়ে বাঁচব, সেই উপায়ও নেই!

‘যেটাতেই হাত দেই, দাম বলে ৮০ টাকা। একটু সবজি খেয়ে বাঁচব, সেই উপায়ও আর থাকছে না।’ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে তরকারির দরদাম করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাত্তার হোসাইন। 

বাসার পাশের আদাবর বাজার আর কৃষি বাজার বাদ দিয়ে মোহাম্মদপুর বাজারে এসেছিলেন একটু কম দামে সবজি পাবেন সেই আশায়। কিন্তু এই বাজারেও আগুন। একান্নবর্তী পরিবারের জন্য দুই কেজি করে করলা, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, পটোল আর শসা কিনতেই খরচ হয়ে গেছে ৭৪০ টাকা। 
 
আজ রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কচুক্ষেত, রামপুরা ও মেরাদিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি করলা ৮০-৮৫ টাকা, বেগুন ৮০-১২০, পটোল ৬০-৮০, বরবটি ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৭০-৮০, শসা ৫০-৬০, টমেটো ১৩০-১৫০, গাজর ১২০-১৫০, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। 

আজকাল তো শীতের সবজিও প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়! ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায়। মুলা প্রতি কেজি ৬০-৮০ আর শিম ১২০-১৪০ টাকা। 

কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে কেবল পেঁপে আর আলু। আলু জাতভেদে কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা। আর কাঁচা পেঁপে প্রতি পিস কোথাও প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। 

রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোতালিব মিয়া বলেন, ‘এখনো তো শীত পড়ে নাই। শীত নামতে শুরু করলে সবজির দাম একটু কমতে পারে।’ 

অধিকাংশ সবজির দামই এখন কেজিপ্রতি ৫০ টাকার ওপরে। শুক্রবার মোহাম্মদপুর বাজার। ছবি: আজকের পত্রিকাআজকাল শাক-ভাত খাওয়ারও জো নেই। এককালে গরিবের বাড়িতে চারটা শাক-ভাত খাওয়ার নিমন্ত্রণ করা হতো। অথচ রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেল, প্রতি আঁটি লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পুঁইশাক ৩০ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বাজারে শাকসবজি কিনতে আসা গৃহিণী হুমায়রা আজিম বলেন, ‘মাছ-মাংস তো আগেই বাদ দিছি। কুচো চিংড়ি দিয়ে শাক-সবজির ঝোল খাওয়ার উপায়টুকুও আর থাকছে না। দু-তিনটা শাক-সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ! আর সবচেয়ে ছোট কুচো চিংড়িটাও ৬৫০ টাকা কেজি!’ 

দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সস্তার ব্রয়লার মুরগি। সেই ব্রয়লারের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজি। 

সাধারণ মসলাও কেনার অবস্থা নেই সবার। পেঁয়াজ জাতভেদে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, রসুন ১২০-১৪০ টাকা, আদা ১৮০-২০০ টাকা হয়েছে। 

গরিবের পাঙাস মাছের (ছোট আকার) কেজিও ১৬০ টাকা কেজি। শুক্রবার রামপুরা বাজার। ছবি: আজকের পত্রিকাবিভিন্ন এলাকায় মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বাজারেই ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০, কাতল ১৮০, পাঙাশ ১৬০, মৃগেল (বড়) ৩৯০, সিলভার কার্প ১৪০, কই ২৫০, শিং মাছ ৫২০, পাবদা ৫৩০, রুপচাঁদা (বড়) ১২০০-১৩০০, রুপচাঁদা (ছোট) ৬৫০, সরপুঁটি ৩৯৫, পুঁটি ২৮০-২৯০ টাকা কেজি। ছোট চিংড়ি (চাকা) বাজারভেদে ৮০০-৮৫০ টাকা কেজি আর কুচো চিংড়ি ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ইলিশ বাজারে না থাকায় অন্যান্য মাছের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তা ছাড়া আগামী ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় অনেক জেলেই নদীতে নামবেন না। তাই মাছের আমদানি কমতে পারে। ফলে এ সপ্তাহ থেকেই মাছের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত