Ajker Patrika

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভাড়া অর্ধেক করল রাইদা পরিবহন 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ২১: ৪৬
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভাড়া অর্ধেক করল রাইদা পরিবহন 

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে চলাচলকারী রাইদা পরিবহনের একটি বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেন বাসচালকের সহকারী। ঝামেলার শুরু এখান থেকেই। পরে একে একে রাইদা পরিবহনের ৫০টির বেশি বাস আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় এই রাস্তায় চলাচল করা অন্য কোনো কোম্পানির বাসকে কিছুই বলেননি তাঁরা। 

রামপুরা থানায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতে রাজি হন রাইদা পরিবহনের মালিকপক্ষের নেতা শাহিন। পরে পুলিশের এডিসি মোহাম্মদ নূরুল আমিন ও ওসি রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে রাইদার মালিকপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা চকলেট বিতরণ করেন। 

সোমবার বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থেকে ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা  করেন চালকের সহকারী। এ ঘটনার পরই পরিবহনের বাস আটকে দেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন সুভা, শামিম রহমান ও ভুক্তভোগী নাবিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, রামপুরা থেকে উত্তরা রাস্তায় চলাচল করা ভিক্টর ক্ল্যাসিক, নাবিলাসহ সব বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া রাখে। কিন্তু রাইদা পরিবহন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয় না। এ ছাড়া তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সোমবার দুপুরে তারা আমাদের কলেজের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেছে। পরে আমরা এসে শান্তিপূর্ণভাবে রাইদা পরিবহনের বাস আটকে দিই। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই বাসের চাবি নিয়ে নিই। পরে বিকেলে রামপুরা থানায় মতিঝিল বিভাগের এডিসি মোহাম্মদ নূরুল আমিন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বাসের মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেয়। এরপর রাইদা পরিবহনের মালিকপক্ষের নেতা শাহিনের হাতে আটকে রাখা বাসের চাবি হস্তান্তর করেছি।’ 

শিক্ষার্থীদের দাবি হলো, রাজধানীসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতে হবে। মহিলাদের বসার ৯টি সংরক্ষিত আসনে কোনোভাবেই পুরুষ বসতে পারবে না। বাসে মহিলারা ওঠার সময় বাসের হেলপারদের নেমে দাঁড়াতে হবে। 

শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাইদা পরিবহনের মালিকপক্ষের নেতা শাহিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা বাসের একজন স্টাফের ভুলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারত। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো হামলা ও ভাঙচুর করেনি। তারা বাসগুলো আটকে রাস্তার পাশে পার্ক করে চাবি নিয়ে নিয়েছে।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ নূরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রামপুরা বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থী ও বাসের কর্মচারীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। থানায় শিক্ষার্থী ও মালিকপক্ষের লোকজনসহ আমরা (পুলিশ) বসে সমাধান করে দিয়েছি। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তোলা দাবিগুলো রাইদা পরিবহন কর্পতৃক্ষ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে।’ 

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাইদা পরিবহনের একটি বাস যখন বিটিভি ভবনের সামনে আসে, তখন বাসে থাকা এক শিক্ষার্থী চেকারকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু চেকার অস্বীকৃতি জানায় এবং তাকে বাস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। এ সময় ওই শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে রাইদা পরিবহনের বাস আটকে দেয়।’ 

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে তাঁরা সড়ক থেকে সরে যান এবং সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অভিযুক্ত বাসটি আটক করা হয়েছে। বাস কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত