Ajker Patrika

অস্ত্র মামলায় খালাস গোল্ডেন মনির, জানা গেল আড়াই মাস পর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

নাম তাঁর মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। মনিরের বাবা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। 

মনির দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। বাড্ডায় নানার বাসায় থেকে তিনি বড় হয়েছেন। বাবার সূত্রে মনিরেরও ব্যবসার শুরু একইভাবে। পরে তিনি মৌলভীবাজার থেকে কাপড় এনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা শুরু করেন। এভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে লাগেজ ব্যবসা শুরু করে। এই ব্যবসার আড়ালে তিনি সোনা চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে যান। এরপর থেকে তিনি গোল্ডেন মনির হিসেবে পরিচিতি পান। 

অবৈধ অস্ত্র, মাদক, বিপুল পরিমাণ সোনা ও কোটি টাকাসহ ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হন গোল্ডেন মনির। এ সব ঘটনায় দায়ের হয় কয়েকটি মামলা। ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সর্বত্র আলোচনার জন্ম দেয় গোল্ডেন মনির। 

এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। মামলার নথিতে দেখা যায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিনিয়র বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মামলার রায় ঘোষণা করে গোল্ডেন মনিরকে বেকসুর খালাস দেন। এত দিন মামলার রায় সম্পর্কে জানাজানি হয়নি। 

আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আলাপ-আলোচনা করে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, একজন পুলিশ কর্মকর্তার বয়ানের উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেছেন, মনির ও তাঁর স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। তাই নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। 

এ ছাড়া এই মামলার নিরপেক্ষ সাক্ষীরা মনিরের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হতে দেখেননি বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

আদালত আরও বলেছেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টায় মনির হোসেনের বাড্ডার বাসার শয়নকক্ষে খাটের তোশকের নিচ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সাক্ষীরা মনিরের শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। র‍্যাব সদস্যরা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের স্বার্থে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা গরমিল রয়েছে। 

 ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‍্যাব। 

পরে মনিরের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১১ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত