Ajker Patrika

হাজতে পুলিশের সামনেই আসামির ১৯ লাখ টাকা লেনদেন

গাজীপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে আপসের শর্তে বাদী ও আসামির টাকা লেনদেনের ভিডিও নিয়ে মহানগর পুলিশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ ও বদলি এবং ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহানগর পুলিশের উপপরিদর্শক (অপরাধ, দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টুটুল সরকার ও আরিফের যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে। টঙ্গীর নৌঘাট ইজারা নিয়ে টাকার লেনদেন নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। তাঁদের দুজনের বাড়িই গাজীপুরে। আরিফের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর যৌথ বাহিনী টুটুলকে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। থানায় আইনি সহায়তা দিতে গিয়ে আটক হন টুটুলের আইনজীবী মো. ইব্রাহিম হোসেন। পরে আরিফ ব্যবসায়িক অংশীদার টুটুলসহ দুজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন। টুটুল আমেরিকান নাগরিক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এলাকায় তাঁর অনেক সম্পদ ও প্রভাব রয়েছে। এসব কারণে টুটুল যেকোনো উপায়ে থানা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু থানা-পুলিশ কোনো তদবিরের বিনিময়ে তাঁকে ছাড়তে রাজি হয়নি। এ কারণে টুটুল থানাহাজতে থেকেই বাদীর সঙ্গে আপস-মীমাংসায় উপনীত হন। আপসের শর্ত হিসেবে হাজতে বসেই টুটুল বাদীকে ১৯ লাখ টাকা দেন। ওই দিনই তিনি জামিনে মুক্ত হন।

এ ঘটনার কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানার হাজতখানার ভেতরে হলুদ গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট পরে বসে রয়েছেন টুটুল। লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে হাজতখানার ভেতর থেকে গুনে গুনে টাকার বান্ডিল হাতবদল করছেন দুই ব্যক্তির সঙ্গে। ১ হাজার, ৫০০ ও ১০০ টাকার এসব বান্ডিল। হাজতের বাইরে থেকে সেসব টাকার বান্ডিল গুনে কালো ও সাদা রঙের দুটি শপিং ব্যাগে রাখছেন আরও দুজন। পাশে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পোশাক পরা এক কনস্টেবল।

ভুক্তভোগী আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ওই দিন ভুল তথ্যে টুটুলকে আটক করে যৌথ বাহিনী। টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করার পর আইনজীবী হিসেবে সহায়তা দিতে গেলে আমাকেও আটক হতে হয়েছে। আটকের পর চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে। এর আগে টুটুল বা আমার নামে কোনো মামলা ছিল না।’

টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হাজতখানায় আটক থাকা অবস্থায় আমার প্রতিপক্ষ আরিফুর ও মহিউদ্দিন আমার কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা আদায় করেছেন।’

মহিউদ্দিন বলেন, ‘হাজতখানা থেকে টুটুলের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছি। তার কাছে আরও অনেক টাকা পাওনা আছে।’ আরিফের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর বলেন, ‘টাকা লেনদেনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নেননি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি মামলার বাদী ও বিবাদী নিজেরা আপস করে টাকা লেনদেন করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, হাজতখানার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মুকতাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামানকে শোকজ ও মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত