Ajker Patrika

স্কুলে ফিরতে চায় হৃদয় মণ্ডলের সন্তানেরা, আতঙ্কে স্ত্রী

রবিউল আলম, মুন্সিগঞ্জ থেকে
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৯: ৫৮
স্কুলে ফিরতে চায় হৃদয় মণ্ডলের সন্তানেরা, আতঙ্কে স্ত্রী

‘ছেলেটা সারা দিন বাসায় মন খারাপ করে বসে থাকে। স্কুলে গেলে সবাই আসামির ছেলে বলে ডাকে, তাই স্কুল থেকেও বলে দিয়েছে আপাতত না যেতে। বাসায় কোনো পুরুষ মানুষ নাই, তাই ঢাকা থেকে ভাই কাজ ফেলে আমাদের এখানে থাকছেন। আমি চাই, আমার স্বামীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এ রকম যেন কোনো শিক্ষকের বেলায় না ঘটে।’ অসহায় চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলসংলগ্ন নিজ কোয়ার্টারের প্রধান ফটক বন্ধ। বাসায় অবস্থান করছে হৃদয় মণ্ডলের পরিবার। বাসা থেকে কেউ বাইরে বের হয় না। কেউ দেখা করতে এলে পরিচয় জেনে তারপর কথা বলে।

ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনার আগে বাসার দরজা সব সময়ই খোলা রাখতাম। এখন ভয়ে থাকি, কখন আবার কে এসে হামলা করে। আমাদের পরিবারে তো পুরুষ বলতে উনিই ছিলেন। এখন তাঁকে অন্যায়ভাবে পুলিশ নিয়ে গেছে। তাই আমার ভাইকে অনুরোধ করে এখানে নিয়ে এসেছি। কখন কোন বিপদ আসে বলা তো আর যায় না।’

এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই স্কুলে যেতে পারছে না হৃদয় মণ্ডলের ছেলে ওই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠ (১১)। আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদককে শ্রেষ্ঠ বলে, ‘স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক মাকে বলে দিয়েছে আমাকে যেন স্কুলে না পাঠায়। স্কুলে গেলে সহপাঠীরা আসামির ছেলে বলে ডাকে; আর সবাই কেমন-কেমন করে যেন তাকায়। স্কুলে যেতে মন চায়, কিন্তু ভয়ে যেতেও পারি না। বাসায় থেকেও আর ভালো লাগছে না। আগে বাবা স্কুলে ছিল, এখন তো কেউ আর নাই।’

ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘শ্রেষ্ঠর ছোট বোন সৃষ্টিকে (৫) এবার স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পর তাকে স্কুলে আর ভর্তি করানো হয়নি। আর ছেলেকেও স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। কারণ, কটুবাক্য শুনে সহ্য করতে না পেরে সে সারা দিন মন খারাপ করে থাকে।’

 

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের পরিবার

হামলার কোনো শঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘শঙ্কা তো আছেই। দুই দিন আগে রাতে দরজায় লাথি মারারও আওয়াজ পেয়েছিলাম। আর পুলিশ প্রথম দিন একজন ছিল; এখন তেমন আর আসেও না।’

তবে আজ সকাল থেকে বাসার আশপাশে পুলিশের কোনো উপস্থিতি না দেখা গেলেও জুমার নামাজের সময় পুলিশের একটি টিমকে স্কুলের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

স্থানীয় দোকানদার বাবুল হোসেন জানান, যেদিন ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শুধু সেদিন এ নিয়ে একটু আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। এরপর গ্রামের মানুষ এ নিয়ে তেমন কথাও বলে না। তবে গ্রামের প্রায় সবাইকে ছাত্ররা জানিয়েছে, হৃদয় মণ্ডল ধর্মের বিপক্ষে কথা বলেছেন এবং এ নিয়ে একটা ভিডিও রেকর্ডও দেখিয়েছে তারা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর আর ঝামেলা হয়নি।

এদিকে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের পরিবারের দাবি, একই স্কুলে ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন হৃদয় মণ্ডল। জীবনে এ ধরনের ধর্ম অবমাননার কোনো অভিযোগ ওঠেনি। যেই দিনের ঘটনা, সেদিন প্রক্সি হিসেবে প্রধান শিক্ষক তাঁকে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ক্লাসে পাঠান। যেহেতু বাংলা বিষয়ে উনি পড়ান না, তাই বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন বলে জানান। তখন ছাত্ররা তাঁকে ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ নিয়ে ছাত্রের সঙ্গে কিছুটা তর্কবিতর্কও হয়। সেটি রেকর্ড করে আরেক শিক্ষার্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত