Ajker Patrika

শ্রীপুরে দুই শ্রমিককে হাত–পা বেঁধে নির্যাতন, জখমে দেওয়া হয় মরিচ–লবণ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ০৫
গাছের সঙ্গে বেঁধে দুই শ্রমিককে নির্যাতন করা হয়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
গাছের সঙ্গে বেঁধে দুই শ্রমিককে নির্যাতন করা হয়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরির অভিযোগে দুই শ্রমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে, জখমের স্থানে মরিচের গুঁড়া ও লবণ ছিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকালে উপজেলার সাইটালিয়া গ্রামে ও আবদার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মাইনুদ্দিন (২৪) ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার বাটিদিয়া গ্রামের মৃত সেলিম মিয়ার ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার সাইটালিয়া গ্রামের ইলেক্ট্রোস পুলস অ্যাড স্ট্রাকচার লিমিটেড নামে বৈদ্যুতিক খুঁটি তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। অপর যুবক আলমগীর একই কবরখানার শ্রমিক। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

ভুক্তভোগী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘আমি জৈনাবাজার এলাকার আবদার গ্রামে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করি। স্থানীয় ফাইজুদ্দিনের অটোরিকশা চুরি গেছে। ফাইজুদ্দিনের লোকজন আমাকে কারখানার সামনে থেকে অটোরিকশায় তুলে জঙ্গলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। এরপর বাড়িতে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পর শরীরে মরিচের গুঁড়া ও লবণ ছিটিয়ে দেয়। আমি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তবু ওরা নির্যাতন বন্ধ করেনি।

দুই শ্রমিকের জখমের স্থানে মরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে দেয় এক নারী। ছবি: স্ক্রিনশট
দুই শ্রমিকের জখমের স্থানে মরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে দেয় এক নারী। ছবি: স্ক্রিনশট

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাছের সঙ্গে পাশাপাশি দুই যুবকের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে এক নারী তাঁদের শরীরে মরিচের গুঁড়া ও লবণ ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কয়েকজন মিলে নির্যাতন করছে। তাঁদের চুরির দায় স্বীকার করতে বলছে। ভুক্তভোগী দুজন আর্তনাদ করছেন। একজনের রক্তাক্ত পা ওপরে তুলে এক নারী মরিচের গুঁড়া আর লবণ ছিটিয়ে দিচ্ছেন। তখন দুজনেই জোরে চিৎকার করছেন। কয়েকজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘মরিচ দুই নাম্বার!’ কয়েকজন যুবক মরিচের গুঁড়া তাঁদের গায়ে ভালো করে মাখিয়ে দিচ্ছেন। একজন যুবক কিছুক্ষণ পর পর গায়ে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কয়েকজন বাধা দিচ্ছেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে বহু মানুষ। কয়েকজন ভিডিও ধারণ করছেন। এত নির্যাতনের পরও দুজন বলছেন, অটোরিকশা চুরির বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।

ভুক্তভোগী শ্রমিক মাইনুদ্দিনের বড় ভাই মঈনুদ্দিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার নাইট ডিউটি শেষে ভোরে আমার ভাই কারখানার সামনের গেটের একটি দোকানে চা খেতে যায়। সেখান থেকে অভিযুক্তরা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধে। বেঁধে ফেলা হয় হাত-পা। এরপর প্রচুর মারধর শেষে মরিচের গুঁড়া ও লবণ দেওয়া হয় গায়ে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করে জখমের স্থানে দেওয়া হয় মরিচ আর লবণ। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমার সামনেই ওরা অমানবিক নির্যাতন চালায়। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার ও কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেও ওরা থামেনি। নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলে আমি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ এসে ভাইকে মুক্ত করে। তবু আমাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। ওদের ভয়ে মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। ওরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে।’

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, ‘নির্যাতনের ভিডিওটি আমি দেখেছি। এমন পাশবিক নির্যাতন কোনো মানুষ করতে পারে না। তদন্ত করে সঠিক বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নির্যাতনের ভিডিও দেখেছি। ভিডিও দেখার পরপরই পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা আইনের আওতায় আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত